একেবারে হাওয়া হয়ে গেছি নাকি আমি আজকাল। আচ্ছা, সত্যি যদি হাওয়া হয়ে যেতে পারতাম মাঝে মাঝে, তবে কেমন হ’ত?
খুব মজা লাগত ফুরফুরে শরীর নিয়ে নিজের, নাকি ভয় পেতুম অশরীরি হয়ে?


জানিনা বাপু এমন হরেক রকম বাজে কথা আজকাল কেন আসে মাথায়। আসলে লকডাউন উঠলে হবে, কি কেউ তো আর বাড়ির পথ মাড়ায় না আগের মত। তাই হয়ত হাবিজাবি ভাবি। মাথার আর দোষ কি বলো, কম তো কিছু হল না। কবে যেন জম্মেছিলুম?  কি জানি মনেই নেই। হবে তা নয় নয় করে অনেক।

দুপুর হ’লে পাতলা একটা ঘুমের আস্তরণে  ঢাকা পড়ে ছানি পড়া চোখের মণি দু খানা। ফের ওই বোস’দের গরু ঘর যেতে যেতে এমন এক হাঁক পাড়ে, তন্দ্রার ঘোরে আমি আঁতকে উঠি। আর একটু হলেই সেদিন বিষম খেয়ে লটকেই যাচ্ছিলুম আর কি।
তাপ্পর সন্ধ্যে হলেই মশার ঝাঁক। তাদের জ্বালায় কি শান্তি আছে গা? নাকি শান্ত হয়ে বসতেই দেবে তারা?  হাঁক পাঁক করে উঠে এসে চারপাশ জুড়ে মিস্টি গান গেয়ে সব্বাই কে ভোলানো শুরু করবে। খুব সুরেলা গলা কিন্তু যাই বলো বাপু। তবে কিনা খুব স্বভাব খারাপ। গায়ে পড়া বলেই দু চার থাপ্পড়  খায়, মরেও। তবু লজ্জা নাই ফের একই কম্ম করে।


আমার আবার অমন ধারা সয় না। দেখি মানুষের রগড়, আর চুপ করে বসে থাকি। কখন আলতা-পিসীর মা শাঁখে ফুঁ দেবেন। তবেই না সন্ধ্যা নামের শ্যাওলা রঙা মেয়েটা বাড়ির পথ ধরবে? সেও তো ঠায় ঠক্কর দাঁড়িয়ে ওই ঝাঁকড়া নিমের নিচটায়। সবই এই পোড়া চোখে দেখি আর ভাবি কবে  যে হাওয়া হবো। সে আর হইনা, বসেই আছি কব্বে থেকে প্যাচাল পেড়ে।


ঝুঁঝকি আঁধার টুকু ঘুচতেই মিশমিশে কালো শাড়ি পড়ে রাত নেমে পড়ে আনাচ কানাচ বাড়ির কারনিশ থেকে মাঠে ঘাটে খালে বিলে সর্বত্র। যে যার মতন সেঁধোয়। কেউ ঘরে কেউ কোটরে। কেউ বা জেগে উঠে পাড়া বেড়াতে বের হয়। আহ কি শান্ত একটা মন কেমন করা হাওয়া বয় তখন। গন্ধ ভাসে ধুপের ধুনোর। আমি ঠায় বসে দেখি এক এক প্রহরের রঙ বদলানো।


পাহারাদার  এর হাঁক শুনেও আজকাল ঘোষাল দের ছোট ছেলেটা ভয় পায়না। বারান্দায় দাঁড়িয়েই থাকে। কি যে দ্যাখে আকাশের দিকে তাকিয়ে! ওর দেখাদেখি আমিও ক’দিন চেয়ে রইলুম হাঁ করে। কোথাও কিচ্ছু নেই। আকাশময় বিচ্ছু তারা’রা চ’রে বেড়াচ্ছে। মা, ছা সবে মিলে দপ দপ করে আলো জ্বালিয়ে দাপাচ্ছে।


অনেক খানি রাতে বাড়ি ফেরে ওই বামুন পাড়ার মেয়েটা। শহরে কি কাজ করে যেন। সাজে গোজে চেনাই যায়না আজকাল আর তাকে। মেয়েরা খুব তাড়াতাড়ি চারা গাছ থেকে মহীরুহ  হ’য়ে ওঠে। ছেলেরা খানিক র’য়ে স’য়ে মায়ের খোকন টি হয়ে থাকে বহুদিন।
কেন যে এমন সব আদিখ্যেতার নিয়ম বাবা কি জানি! বেশ হয়েছি মানুষ হয়ে জন্মাই নি আমি।
তবে আমি কে? আমি হাওয়া? বাতাস? ঝড়?
আমি তোমার ‘মন’ গো ‘মন’!!