চিৎকার করে মা ডেকেই চলছে, "আয় খুকু এদিকে আয়, একটু এখানে বস, আমার হয়ে এসেছে"। সময় নেই আমার। ছুটে চলেছি বাড়ির এধার থেকে ওধার, কিসের অন্বেষণে ভগবানই জানে। টেপজামা খ'সে পড়ে যাচ্ছে বাঁ কাধ থেকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। শুধু অস্বস্তি'র সীমা ছাড়ালে হাত তুলে টেপ জামার ফিতে যথাস্থানে বসিয়ে রেখে আবার সেই অসমাপ্ত কাজে হাত দেওয়া।


উফ, পায়ে পায়ে অপ্রয়োজনীয় ব্যাস্ততা মেখে আছে সর্বদা। সেই পায়েরই পরিচর্যা করার অপেক্ষায় মার চিৎকার । অবশেষে হাতে পায়ের কাজ সামলে একরাশ বিরক্তি নিয়ে— ততক্ষণে মার আলতা পরা শেষ। একটু বোস না কাছে। আলতা পরিয়ে দি।


তারপর উঁচু চৌকির ওপর অমি বসে পায়ের পাতা মায়ের তালুতে সঁপে দিয়ে। মা যত্ন করে লোহার কাঁঠির আগায় স্পঞ্জে আলতা নিয়ে পায়ের পাতার ধার ঘেঁষে গড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে সুড়সুড়ি তে পা দুলে উঠছে। মা ও চিৎকার করছে পা নাড়াচ্ছিস কেন এত। তুমি সুড়সুড়ি দিচ্ছ যে। তারপর দু পায়ে রাঙা আলতা । দেখ ত কেমন সুন্দর লাগছে পা দুটো? লক্ষীর পায়ের মত।


কিজানি মা কি মিল খুঁজে পেত। লাল আলতা পড়া লাল মেঝেতে ছুটে চলা পা কেমন যেন একটা অদ্ভুত মনখারাপি এনে দেয় আজ। সেই চৌকির ওপর মার সামনে বসে মাথা দুলিয়ে চুল বাঁধা। একটা লাল ফিতেকে কেমন সুন্দর বিনুনির সাথে পাক খাইয়ে মাথার ওপর ফুল বানিয়ে বেঁধে রাখা। বা দুটো ঝুঁটি বানিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া। চলতে ফিরতে, কথা বলতে, সেই লাল ফিতেয় আটকান ঝুঁটি আজ কেমন একটা মন খারাপ এনে দেয়।


সেই মেয়েবেলা কবে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আজ অনেকটা পিছনে ফেলে এসেছি। পারি নি অমন করে আলতা পরাতে, চুল বেঁধে দিতে আমার মেয়েকেও। আজ ওগুলো ব্যাক ডেটেড।। অনেক ব্যস্ততার ভিড়ে অনেক কিছুই আজ বেমানান। তবু মায়ের সেইসব স্পর্শ ফ্রিজ সটে ধরা আছে মনের গভীরে। থাকবেও আমৃত্যু। অনুকরন নয়, অনুসরন করতে চাই মা। তবু কেন মা আজ কন্যা সন্তান এত অবাঞ্ছিত । এই দুনিয়ায় কি আর মা শব্দটা থাকবে না?