প্রিয় লাবণ্য,


তোমার চলে যাবার পর থেকে আমার মন খারাপের প্রহর গোনা শুরু হল। যেন পুরোপুরি  নিঃস্ব হয়ে যাওয়া। একটা মৃতদেহর ওপর আবার আর একটা খাঁড়ার ঘা। মুতদেহ হলে শুধু একটু নড়ে উঠত। কিন্তু আমি ত জীবন্ত। তোমার চলে যাওয়া যে বিজয়া দশমীর হাহাকার।
এর কোন ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী হয় না। প্রতিটা ক্ষণ শুরু হয় নিখাদ কষ্ট আর ব্যাথা দিয়ে। তুমি  চলে যাওয়ার আগে কতবার ডাকলে। একবার ও আমার মুখ তুলে দেখার ফুরসত হল না। কি হবে লাবণ্য, এ অভাগার?


-------------অগত্যা সেই তে মাথার মোড় ধরে হেঁটে এসে  ধীর পায়ে তোমার বেড়ার দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আমি ছলছল চোখে। দেখছি একটা সরু রাস্তা শুয়ে আছে অলস শরীরে। আজ সে রাস্তার ও কোন তাড়া নেই। কেউ ওকে মাড়িয়ে  যাবে না। দু একটা পাতা অগোছালো হয়ে ওর বুকের ওপর গড়াচ্ছে। সিমেন্টের বসার জায়গা টা মুখ কালো করে বসে আছে। তোমার প্রিয় কালো খরগোস টা আমার পায়ের ফাঁক দিয়ে বেড়া গলে ভেতরে ঢুকে গেল। তোমার বিস্তারে যেন ওর একার অধিকার। রাস্তাটার দুধারে কতফুল ফুটে আছে সেজে গুজে, হালকা মাথা দুলিয়ে হাসছে। উপহাস করছে আমায়—যে আমার জন্য ছটফট  করে ঐ খানে বসে বসে তুমি কত অপেক্ষা করেছ, আজ এসেছি আমি দেখতে? ঘরের ভিতরে আ্যাকুইরিয়ামে মাছ দের আজ কোন তাড়া নেই, সাঁতার কেটে কে কার থেকে কতটা পটু তা প্রমাণ করার।


ঐ যে রাস্তার ওপর সরু একফালি রোদ আলগোছে শুয়ে আছে, যে তোমার গায়ে আলতো ছুঁয়ে থেকে নিজের অস্তিত্ব অনুভব করত তাঁর আজ কিছু করার নেই। তুমি যে সেই রশ্মির পথ আটকে ওকে কোলে তুলে নাও নি। কি করবে ? কতদুর যাবে ও? ন কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল ছুটে এসেছিল তোমার বুকে একটু তেরছা হয়ে পড়বে বলে।


---------------- আসলে তুমি তোমার অভাব কোনদিন দেখতে পাও নি। যেমন ঘুমন্ত মানুষ নিজেকে দেখতে পায় না। আমি দেখেছি জড় থেকে জীব, আকাশ থেকে প্রকৃতি,  আত্মীয় থেকে প্রতিবেশী সবাই কেমন করে তোমার অপেক্ষায় থাকে। প্রতিটা মুহূর্ত কত যে বেদনাদায়ক হয় তোমায় ছাড়া তা তুমি জানই না লাবণ্য।


তোমার অমিত