প্রিয় অমিত


তোমার বদল আমাকে এক এক পা করে ঠেলে দিয়েছে মহাশূন্যের পথে। ভালবাসা বোধ নামে মনের যে আলাদা একটা চিলেকোঠা ছিল তা  দিনমান পূর্ণ থাকত  তোমাকে পাওয়া না পাওয়ার চুল চেরা বিশ্লেষণ  নিয়ে। যাবতীয়  পাটিগণিত,  বীজগণিত,  জ্যামিতির সমস্ত ছক কষে আগামী যে সময় টুকু আসছে, তাতে কতটাই বা আমার ভাগে পড়বে আর কতটাই বা তুমি অন্যান্য কাজে ব্যয় করবে তার  অনুসন্ধানে প্রতিনিয়ত  নিজেকে ব্যস্ত রাখাই আমার এক এবং এক মাত্র কাজ ছিল।


এখন জগতের ঘটমান ঘটনা প্রবাহে নিজেকে সামান্য কীট ছাড়া তার বেশি কিছুই মনে হয়না। যাবতীয় উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যস্থল এর কেন্দ্রবিন্দু ছিলে তুমি।  তোমার উদ্দেশ্যেই আমার সকাল কে সকাল বলে বোধ হত, দুপুর এর দীর্ঘ চলন লম্বা ট্রেন পথের মত মনে হয়নি কখনোই। আর রাত আসত কালো বেনারসি জড়িয়ে, চাঁদ-তারা'র মেহফিল সাজিয়ে।


এখন সে সমস্ত ঝামেলার ইতি হয়েছে। একপক্ষে ভালই হয়েছে, ঘুম নামক বস্তুটির নিত্য বসবাস আজকাল আমার চোখের পাতায়। অবিশ্যি সে নিজে আসে না, তাকে সমাদরে ডেকে আনি ওষুধ পথ্য সহকারে। নাহলে এ বিরান রাত যে আমাকে বাঁচতে দেয়না। ভালবাসা হীন, আবেগ হীন, আমি তো 'আমি' হতে পারিনা। পালটে ফেলেছি নিজস্বতা  অনেক খানি, বাকিটাও হবে আস্তে আস্তে...


এখন চোখে জল আসেনা কারো মৃৃত্যু সংবাদেও। হো হো হাসির ফোয়ারাও নিজের কানে শুনি নি বহুকাল। সব যেন ঘটে চলেছে, বয়ে চলেছে আপন বৃত্তে। আর আমিও মহাশূন্যে  নিরাকার নিরেট এক প্রাণ, নিজের কাঁধে বয়ে চলেছি নিজের মৃতদেহ।


তবু বেঁচে আছে শেষ তলানিতে  পড়ে থাকা কিছু আশা, খুচরো পয়সার মত। হরি লুটের পর মন্দিরে চাতালে পড়ে থাকা বাতাসাও তো আশা করে, পায়ের চাপে গুঁড়ো হয়ে যাওয়ার আগেই কেও তাকে হাতে তুলে নিক। যেন তেমনিই, 'আশা' টিমটিমে  হয়ে জ্বলে আছে, তেল ফুরিয়ে আসা সলতের আগায়.... তোমার ফিরে আসার।  পুনরায়  সেই কক্ষপথে ঘুরে চলার, তোমার পিছু পিছু। লাবণ্যর এ জন্ম যে তুমি নামের ফুল দিয়েই গাঁথা, যা সে আজন্ম জড়িয়েছে এলো খোঁপায়।  জুড়িয়েছে মানব জন্মের দায়, শুধু তোমাতেই, অমিত।


ইতি লাবণ্য