যোগসূত্রে ঘর আমার শহরের বুকে,
মন আমার আজও বয়
লাল মাটি , নদী তীর, সবুজ ধানের শীষ সর্ষের খেতে।
তাই শহরের বাড়িতে আমার নয়তো সাজানো সবুজ 'লন',
প্রশ্রয় দিয়েছি এক অগোছালো ছায়াঘেরা জঙ্গল ছোট,
কলাগাছ, করবি, কামিনী আর নয়নতারাদের সাথে নিয়ে।
বাড়তে দিয়েছি সবুজকে আমি তার ইচ্ছেমতন
ফার্ন আর কিছু বুনো গুল্মলতাকে প্রশ্রয় দিয়ে।


বেশ তো ছিল আমার শহুরে জঙ্গল মহল,
চারিদিকে ইট চুন বালির প্রাকার ঘেরা তারের জঙ্গলের মাঝে।
পাখিরা আসত কত -
চড়াই শালিক ফিঙে বুলবুলি ওরা
সাথে নিয়ে ঘুঘু কাক আর কোকিল টিয়াদের, প্রভাতী সুসংবাদ নিয়ে প্রাণবন্ত ওদের সুরেলা শিষ কুহুতানে।


সইলনা সুখে আছে দেখতে ওই অবলা পাখিগুলোকে,
তারই সাথে একটু আনন্দ গায়ে মাখা ধূসর আমাকে।


তাই কাল কাল হয়ে হানা দেয় করাল 'আমফান',
উন্মাদ অট্টহাসিতে হানে চরম আঘাত
ভাঙে কোমর জনজীবনের আর গাছগাছালির করে সমূলে উচ্ছেদ।
সর্বাঙ্গীন নিঠুর এই ধ্বংস লীলার শেষে -
নিথর নিস্পন্দ ধ্বংসস্তুপ দেখে হাসে শ্মশানের হাসি ওই ক্রুর 'আমফান'।


আজ পাখিরা কেউ আর আসে নাই ভোরে,
ঘুম ভাঙা আলোয় শুনি নিঃশব্দ হাহাকার -
পরিত্যক্ত আমার ওই শহুরে জঙ্গলের শ্মশানভূমিতে ।
বোবা চাহনিতে দেখি আজ স্বপ্নভঙ্গ ভোরে
সারি সারি নিষ্প্রাণ সাথীদের ভূলুণ্ঠিত অনাদরে,
ওরা যে নিথর আজ - আমিও মূক ও বধির ।
______________________
অমিতাভ (২১.৫.২০২০) বাড়ি, ভোর ৫-৩৫
** ভয়াবহ সাইক্লোন "আমফানের" পরদিন ভোরে আমার বাড়ির ও চারিদিকের ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থা ( বিশেষত গাছ গাছালির পরিণতি) দেখে আমার এই অনুভূতি।