শুনশান্ পথঘাট স্তব্ধ দুপুর , টু শব্দটি নেই কোথাও কোনও ।
হাল্কা দখিনা হাওয়ায় কানে আসে ক্রন্দন পাতা ঝরবার ,
সমগ্র পৃথিবী যেন এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতার চাদরে ঢেকেছে শরীর ।
আঁকা বাঁকা খালপথে এগিয়ে চলেছে নৌকো চিত্রবত গ্রামের বুক চিরে ।
একনাগাড়ে কানে আসে বৈঠার আওয়াজ ছপ্ ছপ্ ছপ্ ছপ্ ।


যতদুর চোখ যায় চারিদিকে শুঘুই সবুজের মেলা ,
দিগন্ত বিস্তৃত ধানের ক্ষেত যেন উদ্ভিন্ন নারীদেহে ছড়ানো মেখলা ,
মাঝে মাঝে দেখা যায় শাদা কাশের গুচ্ছ আর  উঁচু পাটক্ষেত ,  
হালকা হাওয়া দোলা দিয়ে যায় সবুজ ধানের ক্ষেতে ।
এক অদ্ভুত ঢেউ খেলে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ধানের শীষে শীষে,
প্রকৃতি যেন নেচে ওঠে পরম আনন্দে অপার।
সুদুরে দাঁড়িয়ে ওই সারিবদ্ধ কাশবন দিগন্তরেখায়,
দেখে যেন মনে হয় সবুজ কাপড়ের শেষে চওড়া নক্সি সাদা পাড় ।
আঁকা বাঁকা ক্ষেতের আল, গরুর পাল
আর অলস দুপুরে দুরে গাছের ছায়া হতে ভেসে আসে রাখালের বাঁশি ।
নৌকো এগিয়ে চলে কত গ্রাম কত গঞ্জ পার হয়ে ছপ্ ছপ্ ছপ্ ছপ্ ।


নৌকোর ছৈয়ের ওপর বসে  অতি সচেতন
এক মাছরাঙা জলের পানে স্থির দৃষ্টিতে  চেয়ে,
কখন সে ছোঁ মেরে তার শিকারকে নেবে তুলে ।


কাঁচের মত স্বচ্ছ সবুজ জল ,
নিচে তাকালেই দেখা যায় অসংখ্য জল ঝাঁঝরি আর
দুপাশে অগনিত সাপলা ফুলের মেলা ।
ভাল করে তাকালে চোখে পড়ে মাছেদের আনাগোনা ।
মাঝি আপন মনে গলা ছেড়ে গায় –
মাঝি বাইয়া যাও  রে ......
সাথে একনাগাড়ে বাইতে থাকে তার বৈঠা –
নৌকো বয়েই চলে ছপ ছপ ছপ ছপ ।    


নীল আকাশের নিচে সোনারঙা ডানা মেলে
মাথার ওপরে উড়ে চলেছে শঙ্খচিলের দল ।
কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয় দুপুরের নিস্তব্ধদাকে ওরা চিঁহি ডাক দিয়ে ।
নৌকো বয়ে চলে ছপ ছপ ছপ ছপ ।


দুরে একসারি শাদা বক একটা মালার আকারে ঊড়ে চলেছে –
কি অপূর্ব এক শান্ত স্নিগ্ধ নৈসর্গিক শোভা ।
অবাক হয়ে দেখতে থাকি নদীমাতৃক সবুজ গ্রাম বাংলাকে দুচোখ ভরে –
আমার সোনার বাংলা ।  
অদুরেই বয়ে চলেছে কয়েকটি রঙ বেরঙ্গি পাল তোলা নৌকা,
এক অদ্ভুত তৃপ্তির আবেশে মনকে ভরিয়ে ।
গা এলিয়ে বসে থাকি ছৈএর সামনের পাটাতনে ,
ধিরে ধিরে সূ্র্য ঢলে পড়ে -
দুরে ঐ ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে পশ্চিম দিগন্তরেখায় ।
সারি সারি বক, বালিহাস উড়ে চলেছে ঘরের পানে ।
ধিরে ধিরে আঁধার নামে , দুর হতে কানে আসে আজানের ধ্বনি ।
মাঝি এসে নৌকার ছৈএর ভেতর একটা লন্ঠন দেয় ঝুলিয়ে ।
মৃদু আলো আঁধার আর ওই নিস্তব্ধতায়
কেমন যেন একটা মায়াবী পরিবেশ তৈরি হয় ,
চাপ চাপ অন্ধকার আসে নেমে ।
আনমনে বসে থাকি আঁধার পানে চেয়ে ।
দুরে দুরে জ্বলে ওঠে টিম টিম বাতি যত গৃহস্থের ঘরে ,
হাজার তারার ঝিকিমিকি ঐ নিশ্ছিদ্র আঁধারে ।
নৌকো বয়ে চলে আধার হতে ঘন অন্ধকারে
সর্পিল জলপথ দিয়ে
আবিরাম ধ্বনি তুলে ছপ ছপ ছপ ছপ।  
__________________    
অমিতাভ (১৬।১২।২০১৩)