ন যযৌ ন তস্তউ
জীবন চলেছে এঁকে বেঁকে মহা প্রস্থানের পথ বেয়ে।
আমার আজ ঘর আছে তবে ঘরে নেই, ধড় আছে স্বভূমিতে নেই,
অশ্রুরা শুকিয়ে গেছে।
নেই কারও মাথা ব্যথা সময় কোথায়, কেবা শুনবে আমার নালিশ!
শুনে যাই কালের প্রবাহে ওরা কত কথা বলে,
আমিও হাঁটি মিছিলে মিছিলে মানবিক মন নিয়ে।
কখনও রোহিঙ্গা, কখনও সিরিয়া
কখনও বা লেবানন ইরাক প্যালেস্টাইন।
কিন্তু কেবা শোনে আমার দুকথা, সময় যে নাই।


শোনেনি গান্ধী নেহেরু ফজলুল জিন্নারাও সেদিন !
ওনারা তো নেতা, করেছেন জনতাকে উত্তাল,
দেশ নাকি হবে স্বাধীন।
রক্ত দিলেন, দিলেন বলিদান, আমারই শ্রদ্ধেয়
পিতা, খুল্লতাত, পিতামহী।
সংসার ভুলে দেশের আহ্বানে তারা কারাগারের অন্তরালে,
দিন মাস বছর কারও বা যুগ হল অতিক্রান্ত।


একদিন এ দেশ পেল কাশফুলের দোলা নিয়ে বকুলের ঘ্রান,
দেশ হয়েছে স্বাধীন তবে বিভক্ত করে তার হৃৎপিণ্ডটিকে।
গঙ্গা পদ্মা বহে ভিন্ন প্রবাহে লুকোনো গোমরানো স্রোত নিয়ে বুকে।


লক্ষ কোটি জনের নিরব অশ্রু যায় বয়ে, শোনেনা তো কেউ তাদের হাহাকার।
সাগরে ভাসায় তাদের পুজার প্রদীপ করে অশান্ত ঢেউয়ের মাথায়।
নেতারা উল্লাস করে " ফ্রিডম ইন মিড নাইট ",
কারাগার হতে পূর্বজরা হয় বার, বড় কষ্টে নেয় বিষাক্ত নিঃশ্বাস।


নিরর্থক ধর্মের দিশাহীন নিষ্ঠুর লড়াই
নেতারাই দিয়েছে ইন্ধন স্বার্থপর নিম্ন মানসিকতার।
ঘর নাই , মাটি নাই আমার পায়ের নিচে " নো ম্যেন্স ল্যান্ড " !!
এ তোমার সংগ্রামের পুরস্কার -
লও ভূমিহীন গৃহহীন হয়ে তোমার ইপ্সিত স্বাধীনতা !


ওরা হ্যাঁ ওই নেতারাই সেইদিন শোনে নাই ক্রন্দন
সংগ্রাম শেষে কেউ তারা হয়েছেন রাজা মন্ত্রী ষোড়শ উপাচারে,
বিনিময়ে এই সংগ্রামী সর্বহারাদের হাতে তুলে দেন
প্রাণহীন তাম্রপাত্রের 'এপিটাফ' - স্বাধীনতা স্মারক !!


আমরা যাযাবর পেয়েছি নতুন আখ্যান স্বাধীনতা শেষে
ঘর মাটি, পুরেছি উদর জন্মসুত্রে লব্ধ নয়,
গলদঘর্ম করে, লাথি ঝাঁটা খেয়ে বিনাদোষে,
ছিন্নমুলের লড়াই ও অক্লান্ত শ্রমে ।


বিকেলের আজানে মসজিদের দিকে চোখ গেলেই দেখি
মাথার গম্বুজগুলি লাল !!
সন্ধ্যার শঙ্খ ঘণ্টার ধ্বনিতে আজও হারাই ওই তুলসি বেদি,
টকটকে বড় লালটিপে এক প্রশান্ত মুখ নিয়ে ঘোমটা পরা মাকে আমার।


চকিতে হারায় পদ্মা মেঘনা শিতলাক্ষার শিতল পরশ
জল মাটি নদী খাল পদ্ম দীঘি,আমার সাধের গ্রামখানি।
নিমেষে হারাই মসজিদের গায়ের খোলা মাঠ,
মন্দিরের মন্ডপ, বটগাছটার নিচে বাঁধানো চাতালটার শীতল বাতাস।
হারাই ছক্কু ফাজিল মিয়াঁ আর মজিদের আপত্য স্নেহ।
জন্মভুমির মাটি যে আর হলনা ছোঁয়া -
পেয়েছি বিষবৃক্ষের স্বাদ লব্ধ স্বাধীনতায় !!
________________________
অমিতাভ ( ১২.৬.২০১৬) বাড়ি, বিকেল ৫-০০


** ঘটনাক্রমে এই লেখাটি এখানে আমার ৫০০তম কবিতা।