টানা রিক্সার টুং টাং সুরেলা আওয়াজ আর  
ট্রামের চাকার এক টানা ঘড় ঘড় ধ্বনি,
মাঝে মাঝে হুস হুস করে কালো ফোর্ড, মরিস মাইনর
নাহয় ঢাউস বুইকের আনাগোনা।


শুনশান ফুটপাতে অলস দুপুর দেয় গড়াগড়ি-
ঘুমায় দোকানি আর ফুটপাথ গলি।
ঘুলঘুলিতে অবিরাম পায়রার বকুম বকুম,
ঝুল বারান্দাটায় যত চড়াইএর রাজ -একটানা শুধু কিচ কিচ কিচ কিচ।


ছাদের চিলেকোঠায় একান্তে শুয়ে
জানালা দিয়ে দেখি নীল আকাশের গায়
লম্বা কিংবা গোল কুন্ডলি করে -
একরাশ সাদা জেটের ধোঁয়া।


ক্লান্ত ঠেলাওয়ালা আছে শুয়ে দাওয়ার উপর -
গামছা মাথায় গুঁজে উদোম গায়ে নিশ্চিন্তে ঘুম ,
ওপারের আধো অন্ধকার ঘরে -
তিনকড়ি ময়রা একমনে গুজিয়া বানায়।
বসন্ত কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ায়
'গ্রেট ইষ্টার্নের' পাউরুটির গাড়ি ।


নিচের তলা থেকে ভেসে আসে সুরেলা গলা,
অনুরোধের আসরে মান্না দে’র গান।
দুরে গাছের ছায়ায় বসে ঘাম মুছে করে বিশ্রাম-
চার চার পয়সার ফেরি করা বায়স্কোপওয়ালা।


নিস্তব্ধ দুপুর, সুদুর আকাশে ভাসে চিল  
ছায়া এসেে পড়ে তার দীর্ঘ ডানার ওই ছাদের উপর,
ঝিমোয় সারা শহর মধ্যাহ্ন বিশ্রামে।


দুপুরের নিস্তব্ধতা যেন আরও যায় বেড়ে
ফেরিওয়ালার ওই অদ্ভুত ফেরির আওয়াজে-
“বাখরখানি নেবে গো বাখরখানি ...” কিংবা
“ভেটকি মাছের কাঁটা চাই”-ওয়ালার ডাকে।


ঝিমোয় সারা শহর - ভাতঘুমে নেয় যেন দুপুরের বিশ্রাম
একমনে ঘুরে চলে কাঠের ব্লেডের পাখা - বোঁ বোঁ করে।
শুনশান ফুটপাত, অলস দুপুর
ঘুলঘুলিতে পায়রার বকুম বকুম।
===========================
অমিতাভ (১২.৮.২০০১) বাড়ি , দুপুর ২-০০


**  এই কবিতায় আমার ছোট্টবেলার দেখা পুরোণো সাবেকি কোলকাতা শহরের একটা বিশেষ দিক তুলে ধরার চেষ্টা কোরলাম । প্রেক্ষাপট আমার ছোট্টবেলার কোলকাতা। তখনকার কোলকাতা ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন মীর্জাপুর স্ট্রিট, সময় ১৯৫৬/৫৭