আমি খুব ভালো মানুষ কখনো জটিল কিছু চুরি করিনি। যা কিছু চুরি করেছি তা হলো বন্ধুরা মিলে স্কুল জীবনে আম,কাঁঠাল,আমরুজ,তরমুজ,জাম্বুরা,নারকেল, খেজুরের রস,আঁখ ও সর্বশেষ কর্ম জীবনে একটি মাত্র বই।
বইটি খুব মুল্যবান ও দুষ্প্রপ্য ছিলো। ১৯৫৬ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার ছন্দের বিষয়ে লেখা 'নীল রতন সেন'-এর 'আধুনিক বাংলা ছন্দ' শিরোনামের বই।
কবিতার ছন্দ বিষয়ে আমার জানা ও শিখার প্রবল আগ্রহ ছিলো তাই হন্যে হয়ে ছন্দের বই খুঁজছিলাম। একদিন এই বিষয়ে এক সম্পাদকের সাথে আলাপ হচ্ছিল তখন তিনি আমাকে বইটি দেখালেন কিন্তু বাসায় নিয়ে পড়ার অনুমতি দিলেন না। ওই সম্পাদক শুধু সম্পাদনাই করতেন না তিনি একাধারে কবি,কলামিস্ট ও নজরুল গবেষকও ছিলেন। যাই হোক,পরে অনেক কষ্টে তাকে বুঝিয়ে ৩ দিনের জন্য দুই খন্ডের বইটি নিলাম। বইটির ফোটোকপি করে ৩দিন পর ঠিকই ফেরত দিলাম। বইটি পড়ে আমার ছন্দ শিখার দরোজা খুলে গেল আর এই বই থেকেই আমার প্রিয় সেই ধারাবাহিক কবিতা 'তের্জারিমা' শব্দটির আবিষ্কার। তখন আমার সৌভাগ্য যে আরবের সেই হেকিমের মতো ওই সম্পাদক পাতার কোণায় বিষ মেখে রাখেননি,রাখলে হয়তো মারা যেতাম।
বছর চারেক পর একদিন তাঁর ঐ বইটি তাঁর তাক থেকে নিয়ে পড়ছিলাম আর তখনই মাথায় বইটি হজম করার মতলব চেপে বসলো,যে ভাবা সেই কাজ,সোজা চলে আসলাম বাসায় মুল্যবান বইটি নিয়ে। মনে হয় না এই বইটি তেমন কারো সংগ্রহে আছে। এই বইটি আমার কাছে কোটি টাকার সম্পদের চেয়ে হাজার গুণ বেশি। প্রিয় সম্পাদক ফয়েজ উল্যাহ্ সাহেব জানি না আপনি বেঁচে আছেন না'কি মারা গেছেন। আপনার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। বইটির ন্যায্য মুল্য দেবার চেষ্টা করছি 'তের্জারিমা' কবিতার মাধ্যমে। এভাবেই আমি হলাম বই চোর আর এভাবেই সৃষ্টি হল আমার 'তের্জারিমা"।