যারা জ্ঞান থাকতেও অজ্ঞানের মতো কাজ করে পশুর মতো আচারণ করে তারা কখনও মানুষ হতে পারে না-তারা সত্যি অমানুষ।এখানেও একজন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে ফেলে সন্তানকে ভূখা পেটে রেখে সে তার নেশার বোতল হাতে নিয়ে নেশায় ডুবে হাবু-ডুবু খাচ্ছে। কিন্তু পৃথিবীতে সন্তানের কাছে পিতা ছাড়া আর স্ত্রীর কাছে স্বামী ছাড়া কে বড় আপনজন হতে পারে? সন্তান যখন কোন কষ্টে বা বিপদে পরে তখন তাদের মুখ হতে চিৎকার সুরে বাণী বাঁজে হয়তো বাবা না হয়তো মা-গো বলে।
এখানেও এমন একটি কঁচি সন্তানের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেই সন্তানের পিতা যখন তার কাছে নেশা কিনার মতো হাতে মাইনী থাকে না তখন হাতে রণ ক্ষেত্রের শমশের নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঠেক দেয়। কিন্তু সে কি জানে যার কাছ হতে মাইনী নিল কেঁড়ে, সে কি সারাদিন জুতা সেলাই করে এই টাকা এনেছে কি না? সে কি জানে যার কাছ হতে টাকা কেঁড়ে নিচ্ছে তার বাড়িতেও হয়তো তার মতো পত্নী সন্তান ভূখা পেটে কিনা? যার কাছ হতে নিল সে কি দিন মজুর কিনা? কিন্তু সে কিছু জানে না।  তাহলে নিবে কেন? কারণ তার মাথায় নেশার খুনি ছড়িয়েছে তাই। এ সময় দেখা যায় যদি সে দিনমজুরি , মুছি বা ভিক্ষুক টাকা না দেয় তাহলে এখানে হত্যাও করতে পারে। এইযে এত কিছু করে টাকা গহনা আনছে তাহা বিক্রি করে কি ঘরের পত্নীর জন্য সন্তানের জন্য কোন বড় হোটেল হতে ভাল দামি খাবার কিনে আনছে? না, বরং একটা নেশার বোতল কিনে নিয়ে বোতলের দিকে চেয়ে অতি খুশি হয়ে হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরে আসছে। আর তার সন্তান ক্ষুধার জ্বালায় পুঁড়ে চিৎকার করছে। কেহ যদি একমুটো ভাতেও দেয় তাহলে সেটা দেয় লঙ্কা পুঁড়ে। এমন একটি কঁচি শিশু যার মুখ হতে মায়ের দুধের ঘ্রান এখনো যায়নি সে কেমন করে লঙ্কা পুঁড়ে ভাত খায়? ক্ষুধার জ্বালায় যদিও সে লঙ্কা মাখা ভাত খায় কিন্তু মুখের জ্বালায় সে জ্বলনিতে মায়ের সাথে চিৎকার করে। মা কোন উপায় না পেয়ে ঠান্ডা পানি তুলে দেয় সেই শিশুর মুখে। পেটের যন্ত্রনা থামিলেও মুখের যন্ত্রনা আরো বিঁধে। মা সেই শিশুর পাশে বসে সান্তনা দেয় আর কাঁদে তার অশ্রু ফেলে চোখ পাতা। এই সময় এক মুটো ভাত যদি সামনে এনে দিত, তাহলে নিশ্চিত হাসিতে নৃত্য প্রভাত-রজনী উঠিত।
__________________________________________________________________


কে তুমি মানব-অতি-
নেই কি তোমার জ্ঞান হুশ প্রীতি?
নেশায় ডুবে পরে আছ রাস্তার ধারে
পত্নী সন্তান মরিল ক্ষুধায়- অন্ন নেই ঘরে।
কেন নেশায় ডুবে যাও, যাও কোন ভবে
তোমার জন্য দুঃখ এলো সংসারের ভাগ্যে।
তুমি দুশমন-শত্রু।– দেশ জাতি
বদ চরিত্রের মানুষ তাই ঘরে ঘরে জ্ঞাতি।
যুবকের হাতে তুলে দাও নেশা!
তোমার সন্তান ঘরে মরে- রাখো দিশা?
তুমি নেশার লোভে পরে, নেশা খাও গ্রাসে
যুবকের মুখে তুলে দাও মদ- গরম ত্রাসে।
তুমি অমানুষ পশু হৃদয়হীন জাতি
তোমার কপালে আমি তাই,মারি লাথি।


তুমি ডাকাতি লুটে কিনে আনো গাজা
ভিখারির ভূখা পেটে মেরে লোহা দরজা।
কোন দিন আননি সন্তান পত্নীর জন্য নৃত্য প্রভাত
তাই লঙ্কা মাখা কিশোর শিশু খায় ভাত।
কাঁদিয়া চিৎকার মা পুঁড়ে যায় পেট জ্বলে
নিবে না অগ্নি তোর দেয়া ঠান্ডা জলে।
দুঃখিনী কাঁদে মুখে দিয়ে-কাপড় আচল
খলিজা ক্ষত ক্ষত হয়ে উত্তপ্ত মরুস্থল।
লেঠাইয়া ছেলে মায়ের কাঁদনে চেয়ে
চলে গেছে মা লঙ্কা ঝাল,
কাঁদিয়া মা বক্ষে টেনে নিয়ে ঝঞ্জাল।
নেই তোর মায়া নেই কি তোর চোখে?
কিশোর শিশুটিকে খাওয়ালে লঙ্কা ভাত
তাই শাবল ছুঁড়ে মারি আমি তোর বক্ষে।



তুমি রাতের আঁধারে অসি হাতে
দস্যু সেজে দাঁড়াও- ঠেক দিতে।
সে কি দিন মজুরি নাকি জুতার মুছি?
যাহা ছিল কাছে তাহা নিলে কেঁড়ে
পত্নীর জন্য চাল-ডাল নিলে কি তোর ঘরে!
নেশার বোতল নিয়ে হেসে চল পীর
ক্ষুধায় কাতর ছেলে-পত্নীর নয়ন ভরা নীর।
কহে না কিছু তোর চরণে স্বর্গ তার
সব পাপের বোজা শির নরগ কত ভার?
ছেলের বাঁধন ছিড়ে কাঁদনে নিষ্পাপ ঠোঁটে
তোমার জন্য দুঃখ কত জনের ললাটে।
দুঃখিনী কিসের মান্য? কিসের স্বামী?
দু’বাহুতে ধোরমুজ লয়ে শিরে দাও দামিনী।


ধোকে ধোকে তোমার শরীর দেখ ক্ষীণ
বিষ খেয়েছ ভুলে পরে তুমি এতদিন।
তুমি পরিলে ঘরে – রোগা কাতরে
যত্ন দিবে কে?পর সবাই চলে গেল তাই দূরে।
খাও এখন মদ-গাজা-নেই কেহ সাথে
কেহ দিবে না বাঁধা
ওরে বদমাস তিরোধান হবে রাজপথে।
পাশে নেই মৃত্যুর সময় আপনজন
জ্বালিয়ে সবাইকে দিলে মন সুখে,
তুমি সমাজের ছিলে কাল-প্রভঞ্জন।


রচনাঃ ময়মনসিংহ, বড়বাড়ি