কোজাগরী
আমীরুল আরহাম


বহুকাল দেখি না চাঁদ
পূর্ণিমার কথা ভুলে যাই, কোজাগরী দূরে থাক
অন্ধকারে পথ হাঁটতে হাঁটতে হোঁচট খেয়ে
আকাশের দিকে মুখ যায় যখন
ডালপাতা খিলান চুয়ে
চাঁদের আলোয় তিওল ঝরে মাথায়
চোখ ভরে ওঠে অসংখ্য চাঁদে
তারা হয়ে বেঁচে আছে যারা
চোখের গভীর স্বচ্ছাকাশে
পদ্মার ভরন্ত যৌবনে কেউ মেলেছিল চোখ
মুখ দেখার ছিলনা সময় ছিলনা সুযোগ
ডুবে গেছে ওদের কেউ অভিমানে
কেউবা হেঁটে গেছে উদ্ধত অহংকারে
বারোতালা ছাদের উপর
কেউবা উঁকি দিয়েছিল শুক্লা দ্বাদশীর রাতে
কচি কলাপাতার নরম আলোয়
কেউবা সন্ধ্যায় ঘুঁটে পোড়া ধোঁয়ায় তুলসী তলায়
পুকুর পাড়ে সদ্য কাটা কামিনী সরু ধানের উঁচু গাদায়
লবন ঝালে আম খেতে খেতে একনিমেষে দেখা
গ্রামের সরু খাল বয়ে যাওয়া নৌকা বুড়ি গঙ্গায়
কালো মেঘে যতোই ঢাকা থাক
সাথে ছিল চাঁদ হাতের তালুতে
চিকচিক তটের বালুতে  
‘চাঁদ উঠেছিল গগনে’ দেখেছি জলের গভীরে
তবু বাড়াইনি হাত
ছুঁড়িনি পাথর নিস্তরঙ্গ নীলে
সোঁসোঁ বাতাসের মুখে শব্দ ছিল
হটাৎ পলক বৃষ্টিতে ছিল আহ্বান
উত্তাল ঢেউয়ে উন্মাদ সমীরণ
পুকুরে গোপনে শাড়ি ভেজা চাঁদ দেখিনি আর
সময়ের হাত ধরে হেঁটে গেছি দূরে
বঙ্গোপসাগর থেকে আতলান্তিক ভূমধ্যসাগরে  
মোনাকোর ঝুলন্ত বাগানে
মন্দালিউ ন্যপলসের রবিন্সন সৈকতে
আলোজলে মাখামাখি ঢেউয়ের সাথে, সীগালের ডানায়
রিয়ুনিওন দ্বীপের লাগুনায় রঙিন দোরাদের আঁশে
রূপালি চান্দা মনে করিয়েছে চাঁদ
ঝিলিক দিয়েছিল কেউ রিও দ্য জেনেরোর ফাভেলায়
বোরদোর সবুজ আঙ্গুর ক্ষেতে
কোস্তানোভায় জেলেদের গ্রামে রঙের মেলায়
সমুদ্র ওপার চিকচিক নক্ষত্রখুচি জলের গভীরে
উঁকি দিয়েছিল কেউ
হঠাৎ সেদিন তিয়োলের পত্রপুটে মোড়া
অর্বাচীন অতীত পূর্ণিমা চাঁদ
গ্যালাস্কির অগ্নিতপ্ত আলোয়
ঝলসানো তার দেহপোড়া দাগ দেখে আঁতকে উঠি
হাত ধরে তার সাঁতার কাটতে কাটতে
ডুবে যাই-
ডুবে যাই গভীর অন্ধকারে !