সাঁঝবাতি বেশ কয়েকবার কলিং বেল টিপলো,
মা দরজা খুললো না।
বুঝলো বেল এখনও লাগানো হয়নি;
এবার দরজায় ধাক্কা দিলো কিছুক্ষণ,
ঘুম ঘুম চোখে শ্রীতমা দরজা খুললো ...
মাকে বেল লাগাতে বললেই বলে,
'কী লাভ বেল সারানোর?
যে বাজানোর সে তো এমনিতেই বাজাবে...'
তাই সঞ্জু ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সঙ্গেই এনেছে আজ।
মা যে বেল সারাবে না, সে বুঝে গ্যাছে।
সঞ্জুর মনে হয়, বেল না লাগালে
মা ধীরে ধীরে সাইকো পেশেন্ট হয়ে যাবে ,,,

রাত তিনটেতে প্রতিদিন কলিং বেল বাজে,
শ্রীতমা রোজ শোনে ,
প্রথম প্রথম ভয় করতো শ্রীতমার।
কিন্তু, কাউকে একই ভয় প্রতিদিন দেখালে,
সেটা অভ্যেস হয়ে যায়, ভয় থাকে না।
যেমন এখন একা থাকতে থাকতে
আর একা থাকার ভয় নেই. ..


অরিন্দম তিনমাস নেই;
আজ আড়াই মাস এই বেল শুনেই অভ্যস্ত;
কলিং বেল এমনিতে খারাপ ছিল, বাজতো না।
শুধু রাত তিনটের সময় চেনা আওয়াজে মাত্র দু'বার...
শ্রীতমার মনে হয়,
সব মানুষের আঙুলের ছাপ যেমন আলাদা,
তেমন কলিং বেল টেপাও বোধহয় আলাদা,
আওয়াজ আলাদা ...

কলিং বেল তখন খারাপ ছিল।
গতবার কলিং বেল সারানোর পর
রাত তিনটের বেল আর বাজতো না।
দুদিন রাতে বেল না বাজতেই
শ্রীতমার কী যেন নেই নেই মনে হতো।
নাওয়া খাওয়া সব বন্ধ হয়ে গেছিলো...
মেয়ে শ্বশুর বাড়ি চলে যেতেই
গতবার মিস্ত্রি ডাকিয়ে বেল খুলে রেখেছিলো;
রাত তিনটের চেনা বেলের আওয়াজ
আবার ফিরে এসেছিলো...
8
এবারও মিস্ত্রি কলিং বেল লাগাচ্ছে,
শ্রী জানে, মেয়ে গড়িয়া চলে গেলেই
আবার মিস্ত্রি ডেকে বেল খুলিয়ে রাখবে।
মানুষটা তিন মাস নেই,


কলিং বেলটা তো আছে...
এই বেল শুনেই সে বেশ বেঁচে আছে
রোজ রাত তিনটের কলিং বেল...
মাত্র দু'বার...
চেনা আওয়াজ...