বাতিঘর লাইব্রেরীতে হঠাৎ আলতো স্পর্শে অদেখায় তোমাকে ধাক্কা দেওয়া ছেলেটি ছিলাম আমি। মার্জিত ভাষায় দুঃখ প্রকাশ করলাম। এখনো মাঝে মাঝে তোমার সেই প্রিয় লাইব্রেরী তে আমার যাওয়া-আসা চলে। সেদিন ঐ পলাতক বিকেল বেলায় পাশাপাশি ছিলাম দুজনে। কাছাকাছি থাকার প্রবণতা টা হারিয়েছে অনেক আগেই । মুখ তুলে দেখি তুমি আমার সেই পুরনো হারিয়ে যাওয়া আজকের দিনের নতুন অনামিকা। তোমার চোখে চশমাটা এখনো  আছে দেখছি, আগে যে চশমায় তোমায় খুব একটা খারাপ লাগতো তা কিন্তু না। তুমি যে ভালো আছো সেই স্বাভাবিক আচরণটা লাইব্রেরী তে দেখলাম, তোমার সাথে তোমার ছোট্ট ছেলেকে দেখে। খুব উচ্ছ্বাসিত ছেলেটি তোমায় বারবার জড়িয়ে ধরে মা বলে ডাকে। বেশ সুন্দর হয়েছে, দেখতে একদম তোমার মতোই। তাই আর জিজ্ঞেস বা জানতে চাওয়া অনীহা প্রকাশ আমার তুমি কেমন আছো। হুমম ভাবছি অতীতের স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো। ভাবছি  যাকে এক পলক দেখার জন্য কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতর-বাইরে হাজার ছেলের অগোছালো লাইন থাকতো। তোমার মুখ ফেরানো চাহনিতে  কলেজের সেসব ছেলেদের  হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিক  মৃত্যুর   কারণ কিন্তু তুমি ছিলে অনামিকা। যদিও বা সেই মৃত্যুর কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই,নেই কোনো দায়ভার। তাদের শিরা-উপশিরায় তোমার নাম রক্তচলাচলের মতোই  প্রতিনিয়ত চলাচল করেই চলতো। তোমার মুখোমুখি সাহস করে দাঁড়িয়ে কেউ বলতে না পারা "আমি তোমাকে ভালোবাসি" বাক্যের ব্যবহার টি তুমি ব্যবহার করেছো, আমাকে সরাসরি বলে তোমার মনের কথাটা জানিয়ে। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হয়েছিল। পৃথিবীতে এত সুদর্শন পুরুষ থাকতে আমার মতো বেকার যুবকের হাতে-হাত রেখে এই কথাটা শুনাতে তোমার যে একটুও দ্বিধাবোধ হলো না। এক বেকার কেন্দ্রিক  ছেলের ভাগ্যটা আর কতোটুকুই বা সৌভাগ্য?? বেকারত্বের হাহাকার যে বুকে বয়ে বেড়ায়। আমাকে ভালোবাসার কারণও ছিলো বটে। আমার লেখা কবিতা তোমায় খুব বিমোহিত করতো, আমার হাতের লেখার রূপ ধারণ করতো তোমার চাওয়া পাওয়াতে,আমার শান্ত শিষ্ট সাবলীল স্বভাবের প্রতি তুমি দূর্বল ছিলে। অন্য আট-দশটা ছেলেদের মধ্যে আমাকে না খুঁজে পাওয়াটাই ভালোবাসার সূচনা হয়েছিল তোমার মনে। ভাবতে অবাক লাগে, আমার বুক পকেটে কোনো অর্থের সঞ্চয় ছিলো না, নামি দামি রেস্তোরায় না খাওয়াতে পারলেও, পাঁচ-দশ টাকায় প্রেমফল খাওয়াতে না পারলে আমার অভিমানীর অভিমান টা হিমালয় পর্বত ছুঁয়ে যেতো। অবশ্য অভিমানের হিমালয় পর্বতের বরফ গলিয়ে ঠাণ্ডা পানিতে কিভাবে রূপান্তর করা যেতো সেই যাদুবিদ্যা আমার কবিতাতে ছিলো, আমার ঠোঁট ফাটা হাসিতে ছিলো । আর হৃদয়ে ছিলো অগাধ  ভালোবাসা, ছিলো নিত্য নতুন শব্দ বুননে কবিতা লেখার কারুকাজ। তোমাকে ভালোবাসার বিনিময়ে প্রতিদিন প্রতিবেলা একটি কবিতা শোনালে চলবে এমন শর্ত বুঝি প্রযোজ্য ছিলো আমার জন্য। তবে আজকাল কত প্রেমিক কে দেখা যায় যে, তাদের প্রেয়সীর প্রেমের জন্য অর্থের বন্যায় দেউলিয়া হতে। তার দিক থেকে আমার মতো বিরল প্রজাতি একটু তো সৌভাগ্যবান না বললেই নয়। একদিন সমুদ্র পাড়ে হারিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলাম মনে আছে?- আমাকে হারানো ব্যথা তুমি নিতে পারবে তো.? যদি কখনো নিখোঁজ  হয়ে যায়, তোমার শহর ছেয়ে যাবে হারানোর বিজ্ঞপ্তি তে প্রতিটি দেয়ালে দেয়ালে  প্রতিটি সংবাদপত্রের পাতায় পাতায়। ব্যানার কিংবা পোস্টারে ছেয়ে যাবে আমার ছবি।তুমি  কথা দিয়েছিলে হারানোর ভয় থাকবে না। আর এখন আমার মনটা হরন করে চলে গিয়েছো কোন এক অজানা শহরে। মন পোস্টারে ভালোবাসার আঠা দিয়ে লাগানো তোমার ছবিটি লেগেই আছে এখনো। ঐ নিষিদ্ধ করণ শহরে নিজের মন কে নিজেই খুঁজে বেড়ায়।
তোমার প্রচুর সামর্থ্য ছিলো আমাকে ধরে রাখার,
কিন্তু ক্ষমতা ছিলো না আমার, তোমায় গ্রহণ করার।
কেন না, আমি বাস্তবতার সাথে খেলা করা
এক জীবন্ত বেকার।
*************************


৬ঠা সেপ্টেম্বর ২০২১।