মাঠমহলের মিছিলে / অনিরুদ্ধ আলম


ওখানে তুমি কি ছিলে
কাশবনে শাদা রাজহাঁসের মিছিলে
ঘাসবনে ঘন উচ্ছ্বাসের মিছিলে?  
মিছিলে-মিছিলে মেতে উঠেছিল মাঠের মহলগুলো
বনানীর মোড়ে-মোড়ে
উৎসবে মেতে উঠেছিল লতাপাতা খড়কুটো ধুলো।
কাক-ডাকা ঝকমকে একঝাঁক ভোরে
বোতাম পোকাটা ফিরে গিয়েছিল এসে ফড়িঙের দোরে।
ফড়িঙ ছিল না। গিয়েছিল প্রজাপতির নিতল গাঁও
নিতল গাঁয়ের ঘাটে ভিড়ে আছে একটা পানসি নাও।
অমল জলের কোলে দুলেদুলে পানসি নাওটা নাচে
মোরগ ফুলের ঘ্রাণ শুঁকেশুঁকে নদীটা এসেছে সকালে এতটা কাছে।
রোদের আদরে বুঁদ হয়ে থাকা আমোদী নদীর কাঁধে
ভাঙা সাঁকো বেঁচেবর্তে রয়েছে। কত-না স্বপ্ন আছে
কত যে স্বপ্ন আষ্টেপৃষ্ঠে তাকে খুবখুব বাঁধে –
‘একদিন ঠিক সাইকেল হবে। ঘুরবে গেরামপাড়া
আকুল-করানো বুনো বকুলের গন্ধে হবে সে ভীষণ আত্মহারা!‘

ওখানে তুমি কি ছিলে
জামদানি জোছনার একতাল জলমগ্ন মিছিলে
বেলা আর অবেলার লগ্নমিছিলে?
নীলের চাতালে চাঁদ হেঁটেহেঁটে পাতালে পিছলে পড়ে।
গাঢ় ঢেউ ঠেলেঠেলে
ঢাউস দিঘির জটাজলে নড়েচড়ে।  
হাজার দুয়ারি আকাশের বাড়ি ফেলে
ফেরারি হয়েছে মেঘবলাকারা। ছায়াগুলো দেয় ঢেলে।
আলোছায়া মেখে শিশিররা দোলে পুরো প্রান্তরে ছেয়ে নদীর দু’ কূল  
শিশিরের দুল আজ ফাগুনের যেন রাঙা কোনো ফুল।
বলে রাখি, শোনো – ওখানেই এক শান্ত স্নিগ্ধ পয়মন্ত বিকেলে  
ঝুম হেমন্তে ধনেশ গেছিলো ফেলে
একটি নিখুঁত নিবিড় পালক। তার ডানাগুলো রোদে রেখেছিল মেলে
বলেছিল কানেকানে
বসন্ত বউড়ির মতো গানে-গানে,
‘বসন্ত এল কি এল-না – কিছুই যায় আসে না তাতে
হৃদয়ে দারুণ লেগেছে ফাগুন ভালোলাগারই রঙিন অগ্ন্যুৎপাতে!’