নামছে হিরিতনিশির সেনা
              হিরিতনিশির কথা কেউ জানে না,
        জানে না, কি তার মানে?
        ঈশ্বর-ও বেশিদিন বাঁচে না যেখানে
অন্ধকারে রাতের ছায়া নামে বিভীষিকার শহরে,
    যে ছায়া মায়াবী-শরীরে ঘোরে--
কেউ বলে তাদের নাম হিরিক, কেউ বলে নিশি;
    কারও মতে তারা ধ্বংসাত্বক অসুরের মনিষী;
শোনা যায় তারা ভীনগ্রহের অমানব
    বা কোনও প্রাচীন রাক্ষস, কোনো আদিম দানব
অথবা তারা সাধারণ ঘরেরই ছেলে,
    জীবন্ত রক্ত আর মাংস মুখে ঢেলে ঢেলে
          প্রেত হয়ে উঠেছে নারীর নেশায়।


        দেখতে দেখতে শহর ঢেকে যায়--
  রক্তাল্পতার রোগে আর বালিকার মৃত শরীরে,
রাত্রীভোজনে কোমল দেহ, নোখে চিরে-ফেরে-ছিড়ে
         প্রতিরাতে, প্রতিদিনে, প্রতিমাসে,
প্রতি ঘরে ঘরে আতঙ্ক, কখন যে হিরিক চলে আসে!
    যে নিশির ছোঁয়াচে রোগ ছিল শুধু পুরুষে
যে রোগের জীবানুতে তারা রাখে অশরীরি পুষে।
    তাই সিদ্ধান্তে একদিন দেশ বিভাগের আদেশ,
              নারীর দেশ আর পুরুষের দেশ--
প্রবেশ নিষিদ্ধ দুই দেশে, মাঝখানে কাঁটাতার;
বিচ্ছেদ সমস্ত হাত, বিচ্ছিন্ন স্বামি-সন্তান-সংসার,
     মেনে নিতে হয় সব অনাহার,দূর্ভিক্ষ,দূর্বিপাক।
          অন্তত তাদের কন্যাসন্তান সুস্থ থাক,
পবিত্র মুখে যেন না আসে কোনো হিরিকের আঁচড়।


তবে বেড়াজাল আর মানে কতজন নিশি-দেহ-চোর!
       নারীর শহর থেকে আবার দেহ হরন,
পুরুষের দেশে আর একটি খাদ্যের উপকরন;
      মৃত বালিকার আস্ত শরীরটা পকে থাকে
সব থেকেও কিছুই নেই, নিঃস্ব মনে হয় দেহটাকে,
       চলে শুধু হরন, অপহরন আর মৃতদাহ;
      কাটে আতঙ্কের সপ্তাহের পর সপ্তাহ।


হঠাৎ একদিন ব্রতের উৎসর্গ মেনে নেমে এল পরি
             অনেকে বলে, সে এক ঈশ্বরী-
              কেউ চিনত না তাকে প্রথমে,
      ধীরে ধীরে রাতের শহরে হরন এল কমে
          কমে গেল রাতের নিশাচর চলাচল
অক্ষত থাকল মেয়ের দেহ-পোশাক, মায়ের আঁচল
       চলে রাতের চরাচরে অদ্ভুৎ নারীর দৃশ্য,
      ততবেশি পুরুষের দেশ হয়ে চলেছে নিঃশ্ব।
একদিন নারীর শহর জাগল আবার নিশির ডাকে
দেখতে এল তারা হিরিতনিশির পোশাকে কে থাকে?
       তারা পায়নি কোনো ঈশ্বরীর দেখা,
দেখেছে এক বালিকা শুয়ে, প্রহরীর মতো একা-
     ছিন্নভিন্ন পোশাকে মুখে আঁচড়ের ভয়ানক ক্ষত,
তারও সাধারন রুপ, অপহরন হওয়া মেয়ের মতো
      যে রোজ রাতে পাহাড়ায় থাকে শহরের মুখে,
           হিরিক নামে যখন নেশার অসুখে--
প্রথমে পায় পরী-রুপ, তারপর হিরিতনিশির ঈশাড়া
     তাকে নীয়েই রাতের নৃশংস খেলা করে তারা;
    আর হিরিতনিশি রোজ একটি হিরিক নষ্ট করে--
রোজ নীজের ক্ষত বাড়ে,আবার নতূন রুপ ধরে...


--বাঁচতে পারেনি সে খুব বেশি রাত
   কয়েক রাতে অজান্তে আসে আট দশটি হাত--
                         একটি হিরিকের বদলে,
  আরও ভয়ানক নরক যন্ত্রনা দিয়ে যায় দলে দলে;
শূন্য করে দিল তাকেও, দশটি মুখে খেয়ে খেয়ে,
  কত যন্ত্রনা সহ্য করতে পারে আর একটি মেয়ে?
    তবু বছর বারো শান্তি এনেছিল সে দেশে,
   বছর বারো পর ধীরে ধীরে যন্ত্রণায় মরেছে সে--
           উন্মাদ শিহরন ওঠে সকলের হৃদয়ে,
        কেঁপে উঠেছিল তারা আতঙ্কে-ভয়ে--
    এমন ভয়ানক মৃত্যু তারা দেখেনি জীবনে,
 নগ্ন-ক্ষত-দেহ কীভাবে যন্ত্রনা পাচ্ছিল এক কোনে;
             সে এক পুরোনো নৃশংস শিকার--
শত বছরের শত জন্তু ছিড়ে খেয়েছে সব মাংস তার।


         শোনা যায় তারও কয়েক বছর পর
রাতে নামেনি আর হিরিক, নামেনি কোনো নিশাচর,
মাঝে মাঝে পাওয়া যেত এক দুটি হিরিক--মৃত--
      মাঝে মাঝে নাকি হিরিতনিশিও দেখা দিত!
কেউ বলে সে মৃতদেহ থেকে জন্ম নেওয়া শিকারী;
       কারও মতে সে এক সাধারণ ঘরের নারী;
শেষ নিঁখোজ হওয়া মেয়েকে পাওয়া যায়নি খুঁজে
    হিরিতনিশির অর্থ এখন সকলে নিয়েছে বুঝে,
         হিরিতনিশি মানে নারী সুরক্ষার রক্ষক--
       যাকে ভোগ করে মৃত হয়েছে সমস্ত ভোক্ষক;
শান্তিতে থাকে নারীর দেশ, সকলে সুস্থ দেহে বাঁচে।


      শোনা যায় হিরিতনিশি আজও জীবিত আছে!
          থেকে যাবে আরও হাজার বছর পরেও,
            তাকে ভৌতিক মনে করে কেউ কেউ--
         হিরিতনিশি এক জীবন্ত কাপালিকা
বা তার যায়গা নিয়েছে সাধারণ আরেকটি বালিকা,
      আগামী বারোবছরের হিরিতনিশি হিসাবে।
                 হরন যতদিন থেকে যাবে
বা থাকবে শরীর-চোর, নিশাচর, হিরিকের বাহিনী,
     ততদিন শোনা যাবে হিরিতনিশির কাহিনী....


                   (নারীবিষয়ক)