''আমি'' কে? কে ''আমি''?
চিরায়ত প্রশ্নটা শুনি অবিরত।
অনন্ত অনাদি কাল হতে
বিরাজিত। আমাতেই সৃষ্ট আমি।
আমি অব্যয়— আমি অক্ষয়—
নিত্য আমি সদা জাগী
প্রেমের পরশে মানবের দেশে--
সদা করি কাজ নিরলসে।


আমি অগ্নি, আমি দিনমণি
তেজঃ মোর সকল প্রকাশি।
আমি নভঃচরী; জগৎ ধরি
আমার বাহুতে। প্রলয় বাণী
আনি স্বমতে ;আমার সৃষ্টিতে।
আমি  আদিরস— উৎপত্তির কারণ
চৈতন্যের প্রেম-ভাব, ত্রিদেবের নয়ন।
আমি গীতা বাইবেল কোরান ।


আমি পুরুষ -নারী -বৃহন্নলা ,
রাম-রহিম-খ্রীষ্ট- ভোলা।
আমি অন্তর্যামী;সকল জানি
আমি হযরত, আমি ভগীরথ
জীবের উদ্ধারে গঙ্গা আহরণ
মর্ত্যের মাঝারে। আমি পতিত-পাবন।
মন্দির-গির্জা সবই আমার পথ।
প্রেমানুরাগী আমি; চাইনা কোকনদ।

আমি প্রলয়াঙ্কর  শিব-শংকর,
বজ্র নিনাদ প্রনবানন্দ-ওঁমকার ।
সাকার নিরাকার মুরতি আমার।
আমি রুদ্রনাথ, জগৎ-পিতা বিশ্বম্বর।
আমি জটাধরী রয়েছি বিশ্বব্যাপী
খেলছি খেলা সাজি মায়াবিনী
সৃজন-বিনাশ আমার লীলা,
ত্রিভুবনে রচি চন্দ্রতারার মেলা।


আমি রাবন-হন্তা রাম-রঘুবীর
আমিই নানক, আমি মহাবীর
বুদ্ধ হয়ে গাহি শান্তিবাণী
কবীরের গানে জাগাই অন্তরখানি।
আমি উচ্চৈঃশ্রবা, আমি ঐরাবত
অর্জুন-সারথি আমি;চালাই রথ।
আমি গৌর-নিতাই; উদ্ধারি জগাই-মাধাই
আমি শ্রীহরিচাঁদ ওরাকান্দীর গোসাই।


আমি ভক্তশ্রেষ্ঠ পবনপুত্র হনূমান
গোকুলের সখা আমি দেবকী-নন্দন।
পৃথ্বীতে মানুষ সবার সেরা
একই রক্ত-মাংস দিয়ে গড়া।
পার্থিবে মনুষ্যত্ব শ্রেষ্ঠ বিচার,
এর চেয়ে বড় ধর্ম নাই আর।
আমি  মক্কা-মদিনা পুণ্য ব্রজধাম,
কৃষ্ণের কৃষ্ণকলি শ্রীরাধার শ্যাম।

আমি এক। শতাধিক বহুরূপী;
মৃন্ময় মাঝারে  আমি চিন্ময়রূপী।
আমি শাশ্বত  “অক্ষর”—চিরসত্য
আমি চিরশান্ত; নই কভু ঔদ্ধত্য;
অসীমসম আমি, তুরীয়ানন্দের চিদানন্দ
অশেষর শেষ আমি; জগৎ-ছন্দ
নিশ্চল আমি; সকল মোর চালিত।
অতীতের অনতীত, দেহস্থিত দেহাতীত।


আমি দুর্বার দুর্নিবার মহাগতি
আমি সৃষ্টি-বীজ রতিকান্তের রতি।
আমি রাজাধিরাজ নিরাসক্ত সন্ন্যাসী
আমি বৈশদেব- ভৃগু মহাঋষি ।
আমি কামধেনু, আমি প্রানবায়ু
আমি সীমাহীন সীমা; অতনুর তনু ।
আমি ভাবনাহীন ভাবাতুর নির্বিকল্প,
আমি প্রচেষ্টা ; সাধনার সংকল্প ।


আমি সঙ্কট —করি সঙ্কটমোচন
আমার আত্মোপলব্ধি বেদ বচন।
আমি বালুকণা, আমি হিমগিরি
চিরস্থির আমি তথাপি ঘুরিফিরি।
আমি বৃষ্টি; আমি বর্ষণকারী;
সাগরের বুকে ফেনিল লহরী।
আমি বিলয়-পাণি, মা ভবানী।
আমি বীণাপাণি; রচি সুর-রাগিণী।


আমি জলধর মাঝে সৌদামিনী,
তন্দ্রার মাঝে তন্দ্রাহারী জাগরনী।
আমি  জ্ঞানীর জ্ঞান মহাবিজ্ঞান,
আপন খেলায় রচি মম রসায়ন ।
আমি বাঁধনহীন চির উন্মুক্ত;
ভিন্নভিন্ন হয়েও আমি অবিভক্ত।
আমি উত্তাপের-তাপ;জ্যোতির্ময়ীর জ্যোতি      
আমি অন্তহীন ধ্যানমগ্ন মহামতি।


আমি গরল-বিষ; সাগরোত্থাপিত অমৃত
আমি বিবেকানন্দ, সদা পুলকিত।
অভূত আমি, আমাতেই রচি পঞ্চভূত।
আমি অগতির গতি সুরাপতি
আমি ফাতেমা, আমি হযরত আলী।
আমি রামকৃষ্ণ রামপ্রসাদী কালী।
আমি দানবের মাঝে প্রহ্লাদ
সৃষ্টি ভূ-জঙ্গল পাহাড় হ্রদ ।


আমি দুর্জয় আমি বিজয়
আমি পান্ডব শ্রেষ্ঠ ধনঞ্জয়।
আমার বিরাজিত শতকোটি বিভূতি,
খানিক অমৃতধারা রচি তারই
যুগে যুগে  শতকোটি-সহস্রবার
নিজেই জপি স্বনাম বারবার।  

ভালবাসা মোরে করে ভিখারিনী
যে মোরে ভালবাসে সঁপি হৃদয়খানি।
আমি গুড়কেশ; আমি নটীবিনোদনী।
আমি বিন্দুতে গড়ি মহাসিন্ধু
আমি কৃপাসাগর জীবের দীনবন্ধু।
স্বর্গ নরক ধরণী তলে,
পূজলে মোরে অশ্রু জলে
আপন কর্মফলে আমায় মেলে।