আমি তখন বছর পাঁচেক-
ঢাকা মেডিকেল এ প্রাসাদোপম নিবাসে;
মনে আছে বুড়িগঙ্গার বিশালত্ব-
বাদামতলী ঘাট, খ্রীষ্টান স্কুল;
স্টিমারের ভোঁ ভোঁ,
বাড়ির লাগোয়া মসজিদ- বকশীবাজার,
ঈদ এর  ফারসন, পুজোর খুশি।
আকাশ রাঙা সূর্যাস্ত, সবুজ মাঠে খেলা-
করিম, হাবিব, মুকুল, তুষার, নিশিত, রহমান-
ইমাম চাচা আর বাবার  প্রীতি-
রবিবারে চাচার গল্প ; চায়ের আড্ডা-
মনখোলা হাসি, আতরের গন্ধ।


আমি তখন বছর আটেক-
বাতাস যেন এলো মেলো-বারুদের গন্ধ।
বাবার ভয়, চাচার স্তব্ধতা, রাতের শূণ্যতা-
সেদিন দ্বিপ্রহরে অসময়ে বাবার ঝোড়ো প্রবেশ-
রুদ্ধশ্বাস কণ্ঠ- 'বন্ধ করো, সব বন্ধ করো-ওরা আসছে '।
আমার আট বছর - বাকশুণ্য।
দ্বিতলের খড়খড়িতে চুপিসারে চোখ;
ওরা করা? বুড়িগঙ্গার ওপারে?
সারি সারি কালো মাথা, হাতে মশাল-
গগনচুম্বী গর্জন- আল্লা হো আকবর।
আমার আট বছরের মন বোঝনি,
এ ভয়ার্ত শব্দ আর মশালের আগুন,
আল্লার কি প্রয়োজন!


আমার স্তব্ধতা শুনলো বাবার কণ্ঠ:
'  দেখে আসি হাসপাতাল দরজা,
ইমাম কে নিয়ে আসি এক দৌড়ে'।
আমি ছুট্টে গেলাম ছাতের কোনে- চোখ রাখতে;
রক্ত আমার মুহূর্তে  হিম-
দলে দলে তরোয়াল, মানুষের উল্লাস।
ওরা ঢুকছে-আসছে- আসছে- তেড়ে, মসজিদে-
'ডাক্তার তফাৎ যাও- ইমাম চাই'----
এ তো টিনের তরবারি নয়- কিসের নাটক?
বাবা দু হাতে আগলে মসজিদের দরজা -
সেই পাশব উল্লাস, বাবাকে ধাক্কা দিয়ে, চাচা কে টেনে নিয়ে চললো-
চাচার শেষ শব্দ-'ডাক্তার--- তুমি পালা---ও'।
আমার আট বছর প্রথম দেখলো-
বাবার আর্তনাদ, খুনের রক্ত- অধর্মের ধর্ম-
সে বোঝেনি- এ কোন পূজার বলী?


প্রায় শত বর্ষ পরে-
শুনতে ইচ্ছে  করে -
              হাবিব, মঈদুল, রাহমানের ডাক,
              ঘাটের কথা, হাটের কথা।
ঘুরতে ইচ্ছে করে
              এক বাংলা, গঙ্গাপদ্মা
               ময়ূরাক্ষী- মেঘনা;
জানতে ইচ্ছে করে-
              রক্তের জাত, ধর্মের ভাগ
               মানুষ মারার উল্লাস।
আর, দেখতে ইচ্ছে করে-
             বাবা- চাচার আলিঙ্গন-
             যেখানে ধর্মের নাম ভালোবাসা।


@ অপরাজিতা