অচেনা এক ব্যস্ত শহরের এক নিভৃত কোনে, কোনভাবে
একটু নিরিবিলি, গাছের ছায়া ও কংক্রিটের মিশেলে
একটা ভাড়া বাসা খুঁজতে খুঁজতে তুমি আমি,
চলে এলাম এমন এক প্রশান্ত লোকালয়ে,
যেমন নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে চোখে পড়ে
সব পরিচিত দরজা, জানালা, মুখ আর গাছপালা...


আরো অবাক ব্যাপার, একটা আদি সোঁদা গন্ধ,
যেন হৃদয়কান্ডে পরশিত হলো নিজের আবাস।
মাঝে মাঝে সহজে যে কত কঠিন কাজ
হয়ে যায় সেটা ভেবে খুব অবাক হয়ে যাই...


বাড়ীর সামনে কাঠ-বাদাম গাছ, মেরুন মেঝের গ্যারেজ,
কয়েল রডের রেলিং, কিছু ঝুলন্ত টবে ফুটে রয়েছে
আমার প্রাণে দোলা দেয়া চন্দ্রমল্লিকা ফুলের রাশি...
কিভাবে যেন বাড়িটি স্বাগত জানিয়ে গেল অজান্তেই,
আর কোথাও বাড়ি খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন হয়ে গেল...


বাড়িটি আমাদের কাছে ভাড়া হয়ে গেল, না বলে
বলা ভালো, বাড়িটি আমাদের হয়ে গেল এ দূর শহরে...
নতুন বাড়ির মেঝে অথচ আমাদের পায়ের আদরে
কেমন যেন মসৃণ হয়ে উঠেছে কালো সিমেন্টের শান,
ভাবিনি এভাবে তুমি আর আমি আমাদের প্রথম সংসার
এমন বাড়িতে পাবো যা প্রায় আমাদের মনের কাছাকাছি...


সন্ধ্যা হলে বাসায় ফেরার পথটিও খুব আপন হয়ে গেল
যেন এ পথেই আমি ফিরে চলেছি হাজার বছর ধরে,
অথচ এই বছর পাঁচেক হলো বাড়িটিতে বাসা করে আছি;
তোমার আমার প্রথম সংসার, একক রমনীয় আধিপত্যে...
আনন্দে আবেগে নিজেরাই এর নাম দিলাম 'আপন নিবাস'


দুজন মিলে এই আপন বাসায় বসত করে, কে ভাববে
কোনো একদিন, বছর পার হয়ে যাবে একা একা, নির্জনে,
যে দোতলা বাড়ি, তুমি দেখেছিলে, তা তেতলা হয়ে গেছে,
এই বাড়ির কালো সিমেন্টের মসৃণ মেঝেতে তোমার স্পর্শ
আজো তেমন শীতলতা পেয়ে যাই, চাপা গরমেও...


তোমার আমার প্রথম সংসার, একা আগলে রেখেছি আজো,
দরজার পীঠে তোমার বৈশাখে তোলা সারপ্রাইজ ফটো পোস্টার
একইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে প্রতিদিন...
এই ভাড়া বাড়িটাকে বড্ড ভালোবেসেছিলাম দুজন মিলে,
একদিন... প্রতিদিন... ... ...  আজো তেমনি একই রকম
আমি একা ভালোবেসে যাই, আমাদের মত করে...


সন্ধ্যা হলে বাসায় ফেরার পথটি খুব আপন লাগে
মনের মধ্যে বায়বীয় এক সুখের দোলা, যেন তুমি রয়েছ
অথচ তুমি নেই, আমাদের আপন বাসায়, কালো মেঝেয়,
তার পরেও ফিরে ফিরে এসে প্রতিদিন তোমাকে পাই...
পরবাসে বুঝি এভাবেই নিজ গৃহ সৃষ্টি হয়, তোমাকে পেয়ে...



"অতিমাত্রিক স্বপ্নকাব্য"
_________________
উত্তরা, ঢাকা
বাংলাদেশ
১২/০৭/২০১৭