যেখানে আমৃত্যু আবাস আমার
যেখানে আমার নিত্য যাওয়া আসা,
সেই আমার সুখের কুঁড়ে ঘরওয়ালা গ্রামে
তোমাকে একদিন নির্দ্বিধায়...
কোনো একদিন আমি ঠিক নিয়ে যাবো দেখো!


মুলি বাঁশের চাঁটাইয়ের ফাঁক দিয়ে আসা
শীতল বাতাস দিয়ে তোমাকে স্নান করিয়ে দেবো;
তুমি তখন বুঝবে এবং বলবে - এটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্নান...
তোমাকে ক্ষেত থেকে সবুজ মটরশুঁটি তুলে এনে দেবো,
তুমি দাওয়ায় বসে খেয়ো...


তোমাকে পুকুর থেকে ছিঁপ দিয়ে ধরা সঁরপুঠি মাছ,
হাতে দিয়ে চোখ চেয়ে বলবো,
আমাদের জন্যে দারুন দোপেঁয়াজা রাঁধো,
লবন দিতে ভুল ক'রো না যেন!


তোমার দারুন ভ্রুজোড়া একটু বাঁকা হলেই
আমি তেমন হেসে তোমাকে হালকা করে দে'বো...
প্রতিটা দিনই তোমার আমার জন্যে বরাদ্দ থাকবে
ঝিঁ ঝিঁ পোঁকার ডাকওয়ালা রাত;
এক্ষুনি জানতে ইচ্ছে করছে কেমন লাগবে তোমার!


কিন্তু তুমি তো এতটা কাছে নেই, যতটা কাছে থাকলে,
তোমাকে সর্বোচ্চ স্বরে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করতে পারতাম,
কেমন লাগবে তোমার? বলতে পারো!


আমার বেশি কাছে আসতে তোমায় বলছিনে,
অন্ততঃ আমার চিৎকারের নাগালে থেকো...


যেখানে আবাস আমার
যেখানে আমার নিত্য যাওয়া আসা
সেই আমার সুখের কুঁড়ে ঘরওয়ালা গ্রামে
তোমাকে একদিন মহানন্দে...
কোনো একদিন আমি ঠিক নিয়ে যাবো দেখো!


পুকুর ঘাটে বসে তুমি আমার নাঁওয়া দে'খো চেয়ে,
দে'খো কেমন ক'রে তোমার জন্যে আমি পদ্ম তুলে আনি...
তুমি কিভাবে খুশিতে কতখানি হাস্যোজ্জ্বল হবে,
তা যদি এখনই দেখা যেতো...!


তোমার জন্যে ‘কইতরি’ আম পেড়ে দেবো
তুমি মিষ্টি আঁচার বানিয়ে আমায় দেবো যখন তখন,
তোমার আঁচার ‘চেঁটে-খাওয়া আমাকে’ তুমি কিভাবে দেখবে
খুব ইচ্ছে করে এই পোঁড়া চোখ দুটো দিয়ে দেখি, জানো!


দুধ-নীলাভ জ্যোৎস্নায় আমি তোমাকে পাশে নিয়ে
চাঁদ দেখবো বলে কবে থেকে দিন গুনছি...!


তুমি এতো যে ভালোবাসো ভ’রা পূর্ণিমার চাঁদ,
আর কোত্থাও তুমি পাবে না এমন দারুন জ্যোৎস্না-রাত
কি কথা তুমি বলে ফেলবে আমায় জ্যোৎস্নান্ধ হয়ে
তা যদি এখনই যেতো জানা, কত সুখই যে পেতাম...!


তুমি শুধু বলো, একদিন তুমি নিশ্চয়ই আসবে
সেই আমার সুখের কুঁড়ে ঘরওয়ালা গ্রামে,
যেখানে তোমার আমার জন্যে দুব্‌লো ঘাঁসের বিছানা,
আহ্লাদে অধীর হয়ে কোল পেতে রয়েছে...


শুধু তুমি একবার এসো, আর কোনোদিন’ও ফিরে যেও না
বড্ড মন খারাপ করে থাকে জলপাই গাছটা, তুমি নেই বলে...!



উত্তরীয়ঃ
আমার একমাত্র জীবনসঙ্গিনী আজ বহুদিন হয়ে গেলো আমাকে ছেড়ে, ওর প্রিয়জনদের ছেড়ে ঐ দূরাতিদূর দিগন্তে একাকী দাড়িয়ে নির্ণিমেষ অপলক চেয়ে থাকে অনুক্ষণ... কত কি-ই যে ওকে বলতে চাই, কত কি-ই বা ওর মুখে শুনতে পরাণটা একই রকম ভয়ানক আকুল হয়ে ওঠে আজও অথচ উপায় নেই। আমি বয়সে বড় বলে শুধু ওকে বলতাম, “আমি হারিয়ে গেলেও তুমি আমাকে একইভাবে ভালোবাসবে, পূর্ণিমা রাতে কি তখনো চাঁদ দেখে আমায় ভাববে!” অথচ যা উচ্চারিত হয়েছিল ওর জন্য তা বোধ করি আমার নিজেকে শুনিয়েছিলাম সেই ওর আমার সাথের দিনগুলোতে...!