সিঁদুরটা দিয়েছো তুমি,
ব্যস, ওই খানেই সব লেনদেন,
কেনাবেচা, দেওয়া নেওয়ার শেষ- তাই তো।
আর তারপর থেকেই সব দিতে হয় আমাকে।
কী কী দিয়েছি আমি?
এই প্রশ্ন করার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা কর!
প্রথম যেদিন এলাম, তোমার ঘরে,
সেদিন তুমি আমায় বললে 'নতুন ঘর,
নতুন সব, নতুন করে শুরু'।
হ্যাঁ , তারপর থেকেই প্রতিটি দিন নতুন
প্রতিটি সকাল নতুন, প্রতিটি রাত নতুন,
তোমার হাতের আদর নতুন,
বিছানায় পাতা চাদর নতুন।
কিন্তু, পুরনো প্রিয় জিনিসগুলো
ছেড়ে এসেছি আমি।
যানতে চাওনি
সেদিন যে কী কী ছেড়ে এলাম আমি?
আমি বলি কী কী ছেড়েছি আমি-
২৫ টা বছর, যার বারোটা শৈশব,
আর বাকিটা বুঝতে বুঝতে বড় হওয়া যে,
তোর উপর অধিকার কেউ অর্জন করে নেবে।' আর ছেড়ছি বাবার যত্ন, মায়ের আদর,
ভাইয়ের সাথে খুনসুটি, বিকালের লাফদড়ি, সন্ধ্যায় একথালায় মাখা মুড়ি,
শীতের রাতের বৃষ্টি, বাসে করে বন্ধুদের সাথে ইউনিভার্সিটি থেকে ফেরা,
আরও কত কী।
না না। যা ছেড়েছি তা ফেরেনা।
হারানো বিকাল ফেরে না ;
নারীর কৈশোর ফেরে না ;
কুমারীর কৌতুহল ফেরে না,
বসন্তের শিহরন ফেরে না।
শুধু ফিরে ফিরে আসে- তোলপাড় করা
হৃদয়ের ফিরে আসার ডাক।
এগুলো সব ছেড়ে, আমায় নতুন করে শুরু করতে হল, কত সহজেই বলে ছিলে তুমি,
কিন্তু বোঝোনি নতুন করে শুরু করা কতটা কঠিন ছিল।
নিজের কিছু আছে -এখন আর বুঝতে পারি না। আগে সবই আমার নিজের ছিল।
মায়ের গহনা নিজের ছিল,
বাবার উপহার ভাই এর সাথে ভাগ করে নেওয়া ছিল,
তবুতো নিজের ছিল, ব্যস্থতাতেও মায়ের খাইয়ে দেওয়া ছিল,
মায়ের হাতের রান্না, তাও তো নিজের ছিল।
আর এখন তুমি বললে 'সব নিজের করে নাও'।
বেশ,নিজের করে নিলাম।
তোমার মাকে 'মা' বলে নিজের করে নিলাম, তোমার ঘরকে আপন বলে নিজের করে নিলাম, তোমার নামের পদবিখানা নিজের করে নিলাম, রাত দুপুরের সব আবদার নিজের করে নিলাম, 'তোমার ছেলের' সব বায়না নিজের করে নিলাম, সবাইকে খাইয়ে সব শেষে খেতে বসা,
নিজের করে নিলাম,
কাকভোরে জেগে ওঠা নিজের করে নিলাম।
মায়ের কাছে গেলে মা এখনও বলে,
'কিরে দুমুঠো ভাত খাইয়ে দেব,
চুলটা তোর বেঁধে দেব,
আজ একটু বেশি ঘুমোনা মা- ও বাড়িতে উঠিস না হয় ভোরে।'
ভাবি, ও বাড়িটা সত্যি কি আমার মা?
ওখানে আমি কারোর স্ত্রী, কারোর মা,
কিন্তু কারোর মেয়ে তো নয় মা।
এখানে মা আমি তোমার মেয়ে,
ঠিক যেমন ছিলাম আগে।
তাই এখনও যখন এ বাড়িতে ফিরি, মনে হয় মা, এটাই আমার বাড়ি, আর ওটা 'শ্বশুরবাড়ি'
এটাই প্রকৃত পরিচয়।