রাত তিনটায় ঘুম ভেঙে যায় আজকাল,
ঘড়ির কাঁটা থেমে থাকে না, কিন্তু
আমার ভেতরের কাঁটাগুলো থেমে আছে বহুদিন।
আয়নায় মুখ দেখি—
চেনা চেহারা, অচেনা চোখ।
এই চোখ একদিন ভালোবাসত—
এখন শুধু খুঁজে ফেরে নিঃশব্দে ফাঁকা ঘরের চার দেয়াল।
তুমি বলেছিলে,
"ভালোবাসা মানে হঠাৎ করেই হারিয়ে যাওয়া নয়।"
কিন্তু হারিয়ে যাওয়াগুলো বড় চুপচাপ হয়,
ঠিক যেন রেললাইনের পাশ ঘেঁষে হেঁটে চলা
কোনো পুরনো সময়,
যার গন্তব্য নেই।
আমি প্রতিদিন বাঁচি—
একটু করে মৃত্যুর মতো।
চা-এর কাপে লুকিয়ে রাখা বিষণ্ন বিকেল,
কিংবা সিগারেটের ধোঁয়ায় মিশে থাকা
অপ্রকাশিত কবিতা।
তোমার দেওয়া বইটা এখনো খুলে দেখিনি,
ভয় হয়—
শব্দগুলো যদি তোমার মতন হয়ে পড়ে,
চুপচাপ, অথচ ধ্বংসাত্মক।
জানলা দিয়ে চাঁদ ঢোকে মাঝে মাঝে,
তখন মনে হয়,
বুকের ভেতরে জমে থাকা সব শূন্যতাই আসলে
একটা অসমাপ্ত কবিতা।
আমি এখনো লিখি।
তোমার নামে নয়,
তোমার অনুপস্থিতির ভাষায়।
কেউ জিজ্ঞেস করলে হেসে বলি, "ভালো আছি",
আসলে আমি শুধু কাঁদতে ভুলে গেছি।
আমার বিছানায় এখনো তোমার রেখে যাওয়া গন্ধ,
মাথার কাছে তোমার ব্যবহৃত শেষ ক্লিপটা,
যেটা তুমি ফেলে গেলে ইচ্ছে করে, না ভুল করে,
আমি আজও বুঝতে পারিনি।
বইয়ের পাতার ভাঁজে এখনো রয়ে গেছে
তোমার আঙুলের ছাপ—
আর সেই বিকেলের গল্প,
যেখানে তুমি কেঁদেছিলে চুপিচুপি।
ঘরের কোণে রাখা তোমার ব্যবহৃত চায়ের কাপ
একদিন ধুয়ে ফেলেছিলাম,
তারপর কেঁদেছিলাম ঠিক সেই রাতে,
যেদিন বুঝলাম, তুমি আর ফিরবে না।
এ শহরে এখনো বৃষ্টি হয়,
তবে আমাদের মতো আর কেউ ভিজে না।
আমি ভীষণ একা নই,
শুধু তুমি ছাড়া কেউ পুরোটা বোঝে না।
রাতগুলো এখন শব্দহীন হয় না,
তোমার স্মৃতিগুলো চুপিচুপি দরজা ঠেলে ঢোকে,
আমি আলো নিভিয়ে রাখি—
ভেবে নিই, তুমি এসেছো।
কিছু কিছু অভিমান জন্মায় না চিৎকারে,
ওরা জন্মায় নিঃশব্দ প্রস্থানেই।
আমার প্রতিদিনই মনে পড়ে
কিভাবে "আমরা" একসময় "আমি" হয়ে গিয়েছিলাম।