বীথিকা, তুমি আমায় ডেকেছিলে বারে বারে,
আমি ক্লান্ত পথিকের মতো হেঁটেছিলাম—
তোমার ছায়াময় দেহের 'পরে,
তোমার দুপাশের বৃক্ষ-শ্রেনীরা দেখেছিলো আমার অবসন্ন পদচারণা,
ওরা দেখেছিলো—
একটি বিষণ্ণ গোলাপের জন্য আমার উন্মাদনা—
যাকে তুমি তাদের মাঝে করে রেখেছিলে অদ্বিতীয়,
যার সৌরভে—
তোমার দেহখানি করেছিলে তুমি লোভনীয়,
সেই মোহিত সুবাস দিয়ে—
কত পথিককেই না করেছিলে তুমি পথভ্রষ্ট!
সেই গোলাপকে স্পর্শ করতে গিয়ে—
কত যুবক'ই না হয়েছিলো সর্পদষ্ট!
আমি তাই—
গোলাপটির সমীপে যাওয়ার সাহস করিনি,
তাঁকে শুধুই দূর থেকে দাড়িয়ে দেখতাম,
অনিমেষে তাকিয়ে থেকে—
তাঁর সৌন্দর্য উপভোগ করতাম।
শুধু একদিন তোমার কাছে চেয়েছিলাম—
গোলাপটিকে একটিবারের জন্য স্পর্শ করবার অধিকার—
আর তুমি আমাকে উলসিত করে বলেছিলে—
কোনো এক রোদেলা দিনে— গোলাপটি তুমি দেবে আমায় উপহার।
এর পর থেকেই—
প্রতিটি দিনই আমার কাছে মনেহতো রৌদ্র দিপ্ত,
তাই তোমার কাছে আমি ছুটে যেতাম প্রতিনিয়ত—
গোলাপটিকে বৃক্ষ হতে ছিন্ন করবার প্রত্যাশায়,
আর তুমি আমাকে—
আজ নয় কাল; এই বলে— রাখতে আশায় আশায়।
বীথিকা, তুমি একদিন পড়েছিলে এক তীব্র ঝড়ের কবলে—
যেই ঝড়—
তোমার সেই বিষণ্ণ গোলাগটিকে জর্জরিত করেছিলো তার হিংস্র ছোবলে,
গোলাপের রক্তিম পাপড়িগুলো—
সে ছিটিয়ে দিয়েছিলো তোমার শরীর জুড়ে—
অথচ, তুমি সেই ঝড়ের দস্যুতাকে গ্রহন করেছিলে অতি আগ্রহে,
ঝড়ের ক্ষিপ্রতার কাছে গোলাপটিকে তুমি সম্প্রসারণ করে—
নিবদ্ধ করেছো আমায় বিরহে।
বীথিকা, তুমি সেদিন রাখোনি তোমার অঙ্গীকার,
তুমি পাষাণের মতো দীর্ণ করেছিলে আমার অধিকার।
তুমি আমার জন্য অবিশিষ্ট রেখেছিলে শুধু—
কাঁটায় পরিপূর্ণ বিষম দণ্ডটি।
পরিশেষ, পাপড়ি বিহীন সেই পুষ্পদণ্ডটিই আমি কুড়িয়ে এনেছিলাম—
এবং তা আজো আমার কাছে হয়ে আছে পরিপাটি।
পাপড়ি বিহীন পুষ্পদণ্ডটি—
আজ শুধুই— সেই বিষণ্ণ গোলাপের কঙ্কালগ্রন্থি—
যার পরিতুষ্ট সৌরভ হতে আজ আমি বঞ্চিত,
যার কাঁটার আঘাতেই শুধু আজ আমি সমৃদ্ধ:
এ আঘাত যেনো এক জ্বলন্ত বহ্নি।