তখন ২০০৯ সাল
ছেলেটির নাম রাজ।গাংনী পাইলট হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।নিরিবিলি,নম্র,ভদ্র এবং ভীষন আবেগি একটি ছেলে।লেখাপড়ার প্রতি তেমন কোনো মনোযোগ না থাকলেও নিয়মিত স্কুলে যেত।বাবা-মায়ের আদেশ মেনেই লেখা-পড়াটা কোনো রকম চালিয়ে যাচ্ছিল ছেলেটি।আবার নিয়মিত ক্লাসও করত।কিন্তু ক্লাসে দু চারটা ছেলে বন্ধু থাকলেও ছিলনা কোনো মেয়ে বন্ধু।কারন মেয়েদের প্রতি ছেলেটির কিছুটা এলার্জি ছিল।তাই ফ্রেন্ড তো দুরের কথা কোনো মেয়ের সাথে কথা পর্যন্তও বলতো না।রাজের বাড়ি থেকে স্কুলটা অনেকটা দুরে অবস্থিত।তাই সে প্রতিদিন বাসে করে স্কুলে আসা-যাওয়া করত।তাই ছেলেটি প্রতিদিনের মতই আজও স্কুল শেষে বাসে করে বাড়ি ফিরবে বলে ঠিক করেছে।সেজন্যই রাজ বাসে উঠে ঠান্ডা বাতাস খেতে খেতে যাবে ভেবেই জানালার পাশের সিটে গিয়ে বসলো।দুটো সিট হওয়ার রাজের পাশের সিটটি খালি পড়ে ছিল।রাজ কিছুটা আনমনা হয়ে বসে আছে।হঠাৎ রাজ অনুভব করল যে তার পাশে কেউ এসে বসল।এবং যে বসলো সে একটি মেয়ে।না না সে শুধু একটি মেয়েই না।সে যেন সর্গ্ব থেকে পথ হারিয়ে জমিনে নেমে আসা নীলপরী।এক দেখাতেই রাজের কাছে ঠিক যেন এটাই মনে হল।রাজ তখনও মেয়েটির পানে অপলকে চেয়েছিল।কোন ক্রমেই যেন আর চোখ ফেরানো যায় না।ফেরাবেই বা কি করে এতো সুন্দর প্রকৃতিক সোন্দর্য্য যার মাঝে যে কেউই অপলকে চেয়ে থাকবে।মেয়েটিকে দেখে রাজের ভাবনা জুড়ে চলে আসে শুধুই ওই মেয়েটি।তার কি নাম,সে কোন ক্লাসে পড়ে, ইত্যাদি ভাবতে থাকে।ভাবতে ভাবতে যেন রাজ নিজেকেই ভুলতে চলেছে। কিছুক্ষন পরে দেখে মেয়েটি তার পাশে নেই কোথায় যেন নেমে পড়েছে।তবুও তার ভাবনা শুধুই মেয়েটি।একসময় রাজও বাড়িতে পৌছে যায়। তখনও সে আনমনা হয়ে থাকে।তার সামনে মেয়েটির মায়া মায়া চেহারাটা ঘুরপাক খেতে থাকে।ওহ বলাই তো হল না রাজ এবং মেয়েটি একই স্কুলে পাড়তো।কিন্তু রাজ মেয়েটির নাম জানতো না।জানবে কি করে আগে তো রাজ কখনও মেয়েটি দেখেনি।পর দিন রাজ স্কুলে যায় শুধু মেয়েটিকে প্রান ভরে দেখা এবং তার সম্পর্কে কিছু জানার উদ্দেশ্যে।সে স্কুলে গিয়ে জানতে পারে মেয়েটির নাম মেরি।নামটা শোনার পর তার আনন্দ যেন দ্বিগুন হয়ে যা।কেননা যেমন মেয়েটির অপরুপ চেহারা তেমনি তার নাম।সে য়তই মেয়েটিকে দেখে ততবারই মুগ্ধ হয়ে যায়।ধিরে ধিরে সে যেন নিজেকেই হারাতে বসেছে।কোনো ভাবেই নিজেকে ধরে রাখতে পারে না।তাই সে সিদ্ধান্ত নেই সে মেরিকে প্রপোজ করবে। কিন্ত মডার্ণ ছেলেদের মত মেরির সামনে গিয়ে হাটু গেড়ে একটি লাল গোলাপ দিয়ে প্রপোজ করার মত কোনো সাহস রাজের মধ্যে ছিল না।কারন সে আগে কখনও কাউকে প্রপোজ করেনি। এটাই তার জিবনে প্রথম কোনো মেয়েকে প্রপোজ করা।যায়হোক রাজ ভাবলো নব্বই এর দশকের ছেলেদের মত চিঠি দেয়ে মেরি কে তার মনের কথা জানাবে। এটা ভেবেই রাজ চিঠি লেখার জন্য বসে গেল।অনেক কষ্টে এলোমেলো করেই সে চিঠিটা লিখলো।এবার চিঠিটা মেরিকে দেয়ার পালা। রাজ একটু ভিতু টাইপের ছিল তাই সে মেরির সামনে যেতে চাইতো না।তার ঘনিষ্ট এক বন্ধুর মাধ্যমে চিঠিটা মেরির কাছে পৌছায়।সেদিন চিঠিটা মেরিকে দিতে পেরে রাজ এতো আনন্দিত হয়েছিল যে পুরো পৃথীবি কান্না করলেও সে হাসবে।পাখির মত ডানা থাকলে হয়তো পুরো আকাশ জুড়ে মনের আনন্দে উড়ে বেড়াতো।কিন্তু রাজের এই বুক ফটা আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হয়েছিল না।পর দিন স্কুলে যেতে না যেতেই মেরি তার সামনে এসে হাজির। রাজ ভেবেছিল মেরি তার প্রেমে সাড়া দিতেই ছুটে এসেছে।কিন্তু না।মেরি এসেছিল চিঠি ফেরত দিতে এবং রাজকে ঘৃনা করার কথা বলতে।এমন সময় চিঠি ফেরত দিয়েই মেরি চলে যায়।হঠাৎ রাজের পুরো পৃথীবি যেন থমকে যায়।বুক ফেটে কান্না আসে।দুচোখ বেয়ে বৃষ্টি নামে অঝর ধারায়।সে কোনো ভাবেই বুঝতে পারে না কেন এমন হলো।আসলে নিষ্পাপ ভালবাসা গুলো কি এমনই হয়? কাউকে সীমাহিন ভালবাসতে চাওয়াটা কি বেশি বড় অপরাধ?
তবুও রাজ মেরির পিছু ছাড়ে না।সে ভাবে কোন এক দিন মেরি তাকে বুঝবে। কিন্তু না। দিনের সাথে তাল মিলিয়ে রাজের ভাবনা ভুলে পরিনত হতে থাকে।এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে যায় সাতটা বছর। তবুও রাজ সেই মেরিকে এখনও ভুলতে পারেনি।এখনও রাজের মন যেন মেরিময়।এখনও তার বুকের মাঝে শুন্যতা অনুভুত হয়।মেরি য়েন সারা জিবনই তার মনে গেথে থাকবে।জিবনে প্রথম ভাললাগা,প্রথম পছন্দ,প্রথম প্রপোজ, প্রথম প্রেম কখনোই ভোলা যায় না।জিবনের সাথে জড়িয়ে থাকে হাসি,কান্নার সেই সৃতি গুলো।আর জিবনের পথ চলা থেমে গেলেও রাজ কখনোই "মেরি" নামটা ভুুলতে পারবে না।কিভাবে ভুলবে?
কারন নামটা হৃদয়ের গভীরে লেখা হয়ে গেছে।
সব সময় সব ভালবাসা পুর্নতা পায় না।তেমনই রাজের ভালবাসাও পুর্নতা পেলো না।
তবুও রাজের জিবন চলছে নতুন কোনো মেরির খোজে