তুমি যাকে ঈশ্বর বলো। আমি তাকে আল্লাহ বলি। সে ভগবান বলে। সে মহামতি বুদ্ধকেই তাঁর প্রতিভূ মনে করে। সে সূর্যকে। সে শাপকে। সে গাছকে। আর আমরা সবাই সেদিন শুদ্ধ বিশ্বাসী ছিলাম সেই জাহাজে। আমরা মনেপ্রাণে তীব্র ঘৃণা করতাম পৃথিবীর সমস্ত শাপগ্রস্ত নির্বোধ অবিশ্বাসীদের। কিন্তু আচানক মাঝ সমুদ্রে আমাদের জাহাজটা বেমক্কা ঝরের কবলে ডুবে গেল আর আমরা কোনওরকমে ছোটো একটি বাঁশের ভেলায় চেপে প্রাণ বাঁচালাম। আমরা ভীষণ ক্লান্ত ক্ষুধার্ত ও তৃষিত ছিলাম। বেঁচে থাকার জন্য রসদ ও সুপেয় জল অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু চারিদিকে তখন সমুদ্রের নিঃসীম নোনা জল ছাড়া আর কিছু নেই।
এভাবেই তিন তিনটি দিন কেটে গেল অনাহারে। তারপর চতুর্থ দিনে এসে সবাই উপলব্ধি করলাম যে, আমরা যারপরনাই ক্ষুধার্ত ও তৃষিত হয়ে পড়েছি। রাজ্যের ক্ষুধা তৃষ্ণা ক্লান্তিতে আমরা মৃতপ্রায়। সত্যি আমাদের বড্ড দুর্ভাগ্য যে, সেদিন একজনও অবিশ্বাসী ছিল না আমাদের মাঝে। কিন্তু আমাদের তো বাঁচতেই হতো। আমাদের মতো শুদ্ধ বিশ্বাসীরা এভাবে মরতে পারে না। মরে যাক পৃথিবীর সমস্ত কূপমণ্ডূক অভিশপ্ত অবিশ্বাসীরা।
কিন্তু ভাবাবেগের সময় সেটা ছিল না। বাঁচার জন্য তখন আমাদের অনিবার্য সুপেয় জল ও রসদ চাই। আর এভাবে এক পর্যায়ে আমরা পরস্পরের দিকে লোভাতুর চোখে তাকালাম। সত্যি বড্ড পরিতাপের বিষয় যে, সেদিন আমাদের মাঝে একজনও অবিশ্বাসী ছিল না। কিন্তু আমাদের তো বাঁচতেই হতো। আমাদের মতো শুদ্ধ বিশ্বাসীরা এভাবে মরতে পারে না। সূর্যের ঝা চকচকে উজ্জ্বল আলোয় আমাদের রক্তাভ, লোলুপ চোখগুলো ততোধিক ঔজ্জ্বল্য নিয়ে ঝলমলাতে লাগলো খাবার ও জলের ঘ্রাণে। আমরা একে অন্যের দিকে তাকালাম লোভাতুর চোখে।