অাঠরো বছর প‌রে


অাঠারো বছর প‌রে এক ভো‌রে
অা‌মি উন্মা‌দের ম‌তো জে‌গে উঠব
হঠাৎ চঞ্চল স্প‌র্শে, "দাদু চল, প্রভাত ফে‌রি‌তে যা‌বে না?"
অামার দুর্বল স্মৃ‌তি, দুম‌ড়ে মুচ‌ড়ে যাওয়া মুখশ্রী‌তে
তখন চেতনার সল‌তে জ্বালা‌নোর মত কোন জ্বালানী
অথবা তোবড়া‌নো গা‌লে শহী‌দের স্মর‌ণে
গাইবার ম‌তো কোন স‌ুর অব‌শিষ্ট থাক‌বে না।
‌কেবলই ভারী চশমা অার ভো‌রের মৃদু শী‌তে
ওম জড়া‌নো ক্লা‌ন্তি অার বিষন্নতা ভিন্ন
অার কোন অব‌শেষ থাক‌বে না, থাক‌বে না কোন চেতনা।


এক‌দিন জানতাম একুশ এক‌টি শ‌ক্তির নাম
এক‌দিন বুঝতাম সহস্র বছরের নিগৃহীত, নির্যা‌তিত
উপ‌ে‌ক্ষিত বাঙালীর মাথা উঁচ‌ু করে দাঁড়াবার যে
‌বোধশ‌ক্তি, তার নামই ছিল বাংলা ভাষা, তার মা‌টি ছিল
বাংলা‌দে‌শের সোঁদা গন্ধ মাখা মা‌টি, তার প্রাণ রস ছিল
ভাষার মাধুরী, মা‌য়ের বোল, বু‌কের রক্ত; অাজ--
‌সে স‌বের কোন বালাই নেই, নেই কোন বোধলগ্নতা।

এখন যতই শহীদ মিনা‌রে ঢল নামুক মানু‌ষের
তারা কেবলই মানুষ, বাঙালী নয়;
যতই স‌ফেদ পোষাক অার কা‌লো ব্যা‌জে ঢে‌কে যাক
মহানগরীর কা‌লো রাজপথ, কেবলই তা অানুষ্ঠা‌নিকতা
বু‌কের মাঝা‌রে মহাশূন্যতার ছড়াছ‌ড়ি, এক‌ুশে ফ্যাশন।


অা‌মি নতুন বন্ধুর ক‌চি-‌কোমল হাত ধ‌রে সেই ভো‌রে
‌ঠিকই বে‌রোব, অ‌নেক দিন প‌রে, ধীর পা‌য়ে এ‌গোব
শহীদ বেদীমূ‌লে, যেখা‌নে এখ‌নো ছোপ ছোপ রক্ত
শু‌কি‌য়ে কালচে হ‌য়ে সেঁ‌টে অা‌ছে সিঁ‌ড়ির প্র‌তি‌টি ধা‌পে
এ যেন মু‌ছে যাবার নয়। এখ‌নো সিঁড়ি‌তে
তাজা র‌ক্তের ঘ্রাণ, বু‌কের ভিত‌রে বিজাতীয় যন্ত্রণা।


দাদু অামার ভাঙা স‌ুরে গা'‌‌বে প্রভাত ফেরীর গান
"অামার ভা‌য়ের র‌ক্তে রাঙ্গা‌নো ----"
এইটুকু স্বপ্নই অাজো বাঁ‌চি‌য়ে রে‌খে‌ছে।
নয়‌তো ম‌রে অাছি অান্তর্জা‌তিকতার বিজাতীয় মোড়‌কে, ভে‌সে চ‌লে‌ছি ইং‌রেজী ও অারবী
অথবা হিন্দী ভাষার গ‌লিত নর্দমায়।
দাদু অামার বাংলা মাধ্য‌মে পড়‌বে, বল‌বে, শিখ‌বে
‌দেখ‌বে রক্ত পলাশ, শিম‌ুল বকুল বা কৃষ্ণচূড়া;
অাজ থেকে অাঠারো বছর পরে ।


অারশাদ ইমাম/দুঃস্বপ্ন বর্তমান
এক‌ুশ ফেব্রুয়া‌রি ২০১৮/বুধবার/ঢাকা।