রিমি ঝিমি বাদল দিন আসবে, বাতাসে বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ ভাসবে
মাটিতে ভূমিজাত পোকামাকড়ের ভিতরে সঞ্চার হবে নতুন প্রাণ,
নতুন মৌসুমে শুনব প্রথম ব্যাঙের গান, ঘ্যাঙর ঘ্যাং, কী মধুর!
কতকাল দেখিনা বর্ষা, মেঘ-মেদুর দিন! কতকাল হয়না স্নান!
আমি বৃষ্টিবিহীন।


এখনো বর্ষা আসে; বৃষ্টি নয়, যেন পুরুষের কান্না,
গড়িয়ে পড়ার আগেই নিঃশেষ, রেশটুকুও থাকেনা।
এখনও মেঘ জমে আকাশে, কালো হয়ে আসে ঈশান কোণ,
বাতাসের দাপটও টের পাই কখনো-সখনো, কিন্তু তাতে জৌলুস দেখিনা।
আসে আর যায়, রয়-সয় না, তাড়া খুব, অন্যখানে কর্তব্য জমে আছে,
এখানে বেশি সময় দেয়া যাবে না, অনেক কাজ।
আমি বিবর্ণ বিরাণ মাঠ-প্রান্তর, মনে হয় মরুভূমির প্রসব বেদনা,
শুকিয়ে যাওয়া নদী, যেন মরা খাল, প্রাণের কোন চিহ্ন চোখে পড়েনা।
আমার দু’চোখে ভাসে থৈ থৈ পানি, জলভাসা ধানের জমিন,
বুকপানিতে দাঁড়িয়ে কিশোর-কিশোরীর পদ্ম-তোলা, শালুক তোলা দিন,
আমি দেখি স্বপ্ন, দিবা স্বপ্ন, ঘরের চালা বেয়ে নামছে বৃষ্টির মুষল ধারা
একটানা প্রকৃতির, কখনো সশব্দ, কখনো মিহি-করুণ সুর,
কখনো সারাদিন, আবার কখনো টানা কয়েকদিন।


ভিতরে কান পাতি- চোখ মেলি, দেখি গাছের ডালে কদম ফুটেছে,
অদ্ভুত এক মোহনীয় ঘ্রাণ, কখনো সে মৌতাতে মোহিত কেতকী
গেয়ে ওঠে বর্ষা-সঙ্গীত, বৃষ্টি বন্দনা, জলদ গম্ভীর রাগ,
যে গায় সেও জানে না কোথা থেকে আসে এ সুর।
আমি স্মৃতি-বিধুর, ডুব দেই নিজের ভিতরে, কে যেন সেখানে
বাজায় তানপুরা, সকরুণ টান, ভিজে যায় সব।


আবার জমবে মেঘ, আকাশে, উড়ে যাবে, বইবে ভেজা হাওয়া,
আবার নামবে ঝরো ঝরো বৃষ্টি, তৃষিত পৃথিবী হবে জলভরা,
আবার আষাঢ় আসবে জলসিক্ত চোখে, শ্রাবণের ধারা হয়ে ফিরে যাবে,
রেখে যাবে শীতল আমাকে, আরেক বর্ষার অপেক্ষায়, মধুর সে প্রতীক্ষা!
এসো আমার বাদল ঝরা, বৃষ্টি ধারা, কেয়ার সুরে ঘুমিয়ে পড়া
ঘোর বরষার দিন।
আমি বৃষ্টিবিহীন।

এস, এম, আরশাদ ইমাম// বৃহস্পতিবার//ঢাকার জীবন