বাংলাদেশটা দেখবে ঘুরে-এমন মানুষ নাই
সবাই ছোটে ব্যাংকক আর সিঙ্গাপুরে ভাই,
টাকা যাদের আরো বেশি, তারা মক্কা-কাশী
যাদের জেবে নেইকো টাকা, তাদের জন্য ফাঁসী।


ঘুরতে যদি যাবেই তবে বাংলাদেশে ক্যান?
আমলা যদি হয় তো যাবে জেনেভা স্পেন,
না হয় যাবে আমেরিকা, বিশ্ব ব্যাঙ্কের বাড়ি
রথের দেখা হবে, সঙ্গে মিলবে রসের হাঁড়ি,
মিলবে গেলে জ্ঞান-বুদ্ধি দক্ষিণ কোরিয়া
ইংল্যান্ড, জার্মান, জাপান, মেলবোর্ন অষ্ট্রিয়া,  
প্রযুক্তি বা নকলনবিস, কিংবা ব্যবসাপাতি,
সব দিকেতে আজকে দিনে চীনের আছে খ্যাতি।
মানব জাতি গরীব অতি চাই চাকরী টাকা
তাহলে যাও মধ্যপ্রাচ্য, হোক না জমীন ফাঁকা।
সবচে’ ভালো ব্যবসা বোঝে আদম পাচারকারী
অল্প বয়স, বেশি বয়স, পুরুষ কিংবা নারী।
ক্লাইমেট চেঞ্জ, টেক ট্রান্সফার, অাইসিটি বিজনেস,
রপ্তানি আয় এক বিলিয়ন ডলার লক্ষ্য গড়ি বেশ।
জাহাজঘাটা নতুন ক্ষেত্র, ভাঙ্গা নয় রে গড়া,
নরডিক দেশ তাকিয়ে আছে, বিটুবি-দিন সাড়া।
আরো আছে দূরপ্রাচ্য, না হয় আফ্রিকাতে,
মরুর বুকে অাবাদ হবে বাংলাদেশীর হাতে।
ফুল ফসলে তুলবে ভ’রে মরুর উষর ভূমি,
কাজের জন্য ছুটবে ছেড়ে প্রিয় স্বদেশ ভূমি।
এসব সফর প্রয়োজনে, আনন্দ নাই এতে,
বুর্জ খলিফা, মরিশাসে, আছেন দৃষ্টি পেতে।
আমলা যাবে স্টাডিতে দেখতে সরজমিন,
এসব দেশে লোক পাঠানো কতটা সঙ্গীন,
নিরাপদ কী এই জনপদ ব্যবসা কেমন হবে,
আমলা ছোটেন এদেশ ওদেশ নিবেদিত সবে;
সুযোগ যদি আসে জাতির সেবা করে করে,
জাতিসংঘের অধিবেশন এবার আসবে ঘুরে;
টাকা দেবে রাজ কোষাগার, সঙ্গে কলিগ নারী
দেশের কাজে বড়ই ব্যস্ত, ফিরতে চায় না বাড়ি।


যাদের টাকা বর্ণ মাখা সাদা কিংবা কালো
তাদের জন্য হংকং আর হনলুলুটাই ভালো
যাদের আছে পকেট ভরে ডলার কিংবা পাউন্ড
বাসায় শোভা বাড়ায় এ্যালসেশিয়ান আর গ্রে-হাউন্ড
তাদের কি আর দেশে মানায়, মাথায় সেশেলস্, বালি
নিদেনপক্ষে যাবে তারা নায়াগ্রা মানালি
মাচু পিচু, গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন, হা লং বে বা ফিজি
তাদের জন্য দেশের কাব্য মাথায় হিজিবিজি।
পাতায়া কি এই পৃথিবীর বড় মুসলিম খানা
ব্যাংকক না গেলে বাছার ঈদ শপিং জমেনা।
আরো আছেন টাকার কুমীর, লুঙ্গী নিমা গায়ে
পান চিবোন আর কথ্য ছাড়েন, তাকান ডানে বাঁয়ে
বছর শেষে হঠাৎ করে থাকেন অন্তর্ধানে
কেউ জানে না কোথায় গেছেন, গিন্নী প্রমাদ গোণে।
এসব শখের পরিব্রাজক ঘোরেন তলে তলে,
ঘাড়ের ব্যথা হতে পারে তাদের ধরতে গেলে।


বাংলাদেশের ভ্রমণ মূখী বিত্তশালী যারা,
কী লাভ হবে দেখে তাদের নূরাণী চেহোরা?
তাদের পূণ্যি ধন্য করে দেশের বাজার-পোর্ট
তারাই আনে টাকার জোরে গণতন্ত্রের ভোট।
তাদের হাতে লক্ষ্মীমণি, স্বরস্মতী, রাধা-
ইনজিনিয়ার আর ডাক্তার তাদের হাতে বাঁধা
সার্টিফিকেট, নম্বর পেশ কী চাও হয়ে যাবে
ফেল কড়ি কাঁড়ি কাঁড়ি ঘরে বসেই পাবে।


বেঁচে আছো, মামলা অনেক, গিলছে উকিল টাকা
কাহাতক আর ভালো লাগে বলেন এসব, কাকা
তারচে’ ভালো মেরেই ফেলো, নিজের ছায়া টাকে
মৃত্যু সনদ দাখিল করো, মোকদ্দমার ফাঁকে,
খারিজ হবে পাওনা দেনার দাবী যত আছে
মৃত মক্কেল আত্মীয় নেই, ব্যাংক বাহাদুর বাঁচে
ঋণগ্রহীতার মৃত্যুর পর মামলা খারিজ হলে,
বোর্ড মেম্বার হবেন খুশি পার্সেন্টেজ পেলে।
এবার যাবেন অস্ট্রেলিয়া সিডনী অপরোতে,
সময়টাকে সাজিয়ে নেবেন, শ্বেতাঙ্গীনীর সাথে।
কে বলে ভাই গরীব এ দেশ গরীব অর্থনীতি
এসব দেখে ভাবছ তবু নেই কেন সম্প্রীতি!
আসল খেলায় সকলে এক মন্ত্রী-এমপি-বণিক
অসামরিক আমলা কিংবা সামরিক-সৈনিক
আমরা যারা বোকা তারা বাইরের রূপ দেখি
ভালো করে দ্যাখো ভায়া আসলে সব মেকী,
যা দেখি তা ভাবি কেন, এসব বোধয় সত্য
আসল ভ্রমণ করছে তারা পাতাল স্বর্গ মর্ত্য।


তারচে’ ভালো নয় কি ছড়াই আলো দেশের কোণে
বন্যাক্রান্ত মানুষ যখন রিলিফ প্রহর গোণে,
টাকা যদি ছড়াতে চাও দেশেই ছড়াও ভায়া
যাকাতটা দাও হিসেব করে, ছাড়ো টাকার মায়া।
গরীর দুখীর হকটা এবার আদায় করো পুরো
তাতে তোমার জীবন শেষের সফর হবে শুরু
স্বর্গ সফর যাবার কি ভাই ইচ্ছে হয় না মোটে?
সেখানেও তো আছে মেওয়া, হাজার গোলাপ ফোটে।
পায়ের নিচে বইবে নহর শরাবন তহুরা,
কম কী রে ভাই সে নৌবিহার, সেই সফরই সেরা।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//২৭ জুন ২০১৫; শনিবার; ১৩ আষাঢ় ১৪২২//ঢাকার জীবন


[ বিঃ দ্রঃ কবি শ. ম. শহীদ এর কবিতা পাঠে মনে হলো এরকম বা অন্যরকম একটি কবিতা লেখা যায়, তাই ক’ লাইন লিখেছি। দীর্ঘ হওয়ায় ক্ষমা চাইছি।]