১.


আজ আমি ধিক্কার নিতে এসেছি, দেবে কী!
পারবে? আমাকে সহস্র কোটি ধিক্কারে শতছিদ্র করে দিতে
পারবে কি আমার চোখের অদৃশ্য পর্দার উপরে
নতুন কোন লাজ-লজ্জার আবরণ চাপাতে? পারবে?


আমি সেই কবে থেকে-
হয়তো আমার পিতা, পিতামহ বা প্রপিতামহ অথবা
তারও পূর্ব থেকে রক্তের ভিতরে, বংশগতির ভিতরে
পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কীটের চেয়েও নিকৃষ্টতর
জীন বহন করে আনছি-আর পারি না,
এবার প্রকাশের পালা।
অামি সেই সাহসী বীর যে এই মহাবীজকে
সহস্র বছরের পুরনো সেই মহানষ্টবীজকে
আমার জীবনের মধ্য দিয়ে বীজের জীবনের এ পর্বে
মুক্তি দিয়েছি, মাটিতে ঢেলেছি, উপ্ত করেছি।


আমি তো ক্ষণজন্মা- এই জন্মেছি, এই মরে যাবো
মৃত্যু? এ আর এমন কী!
কিন্তু দেখো, আমার ‍উপ্ত বীজে পৃথিবী অবশ্যই
নির্লজ্জতা, নিকৃষ্টতা আর পশ্যাধমতার বুনোগন্ধী ফুলে ভরে যাবে-
এ আমার জয়, কালভেরী।


আমি সেই জয়োল্লাস বুকে ধারণ করি,
যাতে আছে পরনারী অভিগমনের বিকৃত স্বাদ,
কলুষিত স্খলিত দিন যাপনের বিকৃত উল্লাস, আছে
নষ্ট মনের উন্মত্ততা, বীভৎসতার নোনতা-গলিত স্বাদ
শিশু রাজনকে হত্যার নারকীয় উচ্ছ্বাস!


জানি এ সমাজ-রাষ্ট্র আমাকে আইনের সকল উপাদেয়
পরিবেশনের দায় কাঁধে নিয়ে বসে আছে।
আমার চিরমহান প্রপিতামহ নরকের আগুনে বসে ভাবছেন
‘‘আ-হা! বাছা আমার। এতদিনে যদি দু’দন্ড পরিতৃপ্তি মিলে!
এতদিনে আমার ফেলে অাসা নষ্টবীজে
কী দারুণ চারা গজিয়েছে! আ-হা কী পরম শান্তি, পরম পাওয়া!’’
আমিও এখন পরম পরিতৃপ্তিকে চোখ বুঁজে আছি,
সারাদেশ, সারা অন্তর্জাল জগত, অথবা গণ্য-অগণ্য
বা অগণ মাধ্যম আমাকে নিয়ে দারুণ ব্যতিব্যস্ত,
কেননা, আমি এখন নক্ষত্র।


২.
‘‘হে আমার প্রপিতামহ, তোমার এ নক্ষত্রকে তুমি
নরকের সর্বোচ্চ স্থানে বসাবার সকল অায়োজন সম্পন্ন করো,
যদিও জেনো আমার আগমন কিঞ্চিত বিলম্বিত হবে-
কেননা, সভ্য সমাজ সভ্য মানুষ তো সহজে আমাকে-
‘‘গণপিটুনীতে হত্যা করতে পারেনা’’
‘‘আমার নষ্ট দেহে গলিত বিটুমিন ঢালতে পারে না’’
‘‘রাষ্ট্রীয় বুলেট ক্রস ফায়ার হয়ে আমার দেহে প্রবিষ্ট হতে পারে না’’
‘‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীর মতো আমি শ্রেয়তর,
আমার জন্য বিশেষ ক্ষমতা আইন ক্ষমতারহিত’’
‘‘আমি এখন সমাজে সবচে’ আলোচিত ও সভ্যগণের গর্বের ধন’’
‘‘আমার জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ খসিয়ে
পুলিশ ব্যস্ত হবে, বিচারকগণ মূল্যবান শ্রম ঘন্টা
নষ্ট করবেন কয়েকশত, আমার জন্য উকিল-মোক্তার
কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ বওয়াবেন এমুখী-ওমুখী, আমার সংবাদ
প্রতিমুহূর্তে চাউর হবে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল সর্বত্র।
আমি কী এখন আর যা-তা! হে আমার পিতা!’’


আমার জন্য সরকারের প্রশাসকের দিবানিদ্রার
একটুও ব্যাঘাত হবেনা;
রাশভারী শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর মন্ত্রী বা সচিব
আমাকে দেখতে এলেও আসতে পারেন, কিন্তু
নিশ্চয়ই রাজনকে বিদায় জানাতে যাবেন না!
তাদের ভাই এতটা সয় না!


তাই তোমরা পার কি আমার এই দেহের উপরে একবার .....ছিটিয়ে দিতে ?
কারণ, যে যাই দিক, ওটাই আমার পরম প্রাপ্তি।।


এস, এম, আরশাদ ইমাম// ১৪ জুলাই ২০১৫; মঙ্গলবার-ভোর ৫:৪৮; ২৯ আষাঢ় ১৪২২//ঢাকার জীবন


[সিলেটে ছোট্ট শিশুকে যেভাবে পিটিয়ে হত্যা করে, সেটা ভিডিও করে ইউটিউবে আপলোড করে বিকৃত উল্লাসের ও ধৃষ্টতার চূড়ান্ত প্রকাশ করা হয়েছে, তারপরও প্রশাসন নিশ্চুপ; সেখানে এমন ভাবা ছাড়া আর করারই বা আছে কী! ধিক!]