২.
কোন একদিন অকস্মাৎ কোন কারণে
আকাশ জুড়ে ভেসে আসে ছায়া
           কখনো পাখির মতো
           কখনো শকুন-চিলের মতো-
           রাজহাঁস, গাংচিল, মরাল গ্রীবা নয়
           অথবা নয় কোন ডাকাবুকো কোন পাখির মতো
           কখনো মেঘের মতো
           অভাবিত কোন কোন কালে
আকাশ ভেঙ্গে নামে বৃষ্টির ঘণঘটা;
           দাবদাহে তাপিত বুক
           ঝির ঝিরে বাতাসে প্রফুল্ল মুখ
           অথবা বিরতীহীন প্রাণোচ্ছ্বাসে
           প্রসারিত খেলাময় সময়
ভেঙ্গে খান খান করে ছুটে আসে অজানা শব্দ;
                  অজানা আয়োজন
                  অজানা যোজনা।
সবুজের মাঠ চিরে, গাছের বাথান ছিঁড়ে
শস্যের শাঁসালো বুক, নির্দয় বিদীর্ণ করে
সকল সরলতা, সকল উদারতা, অবারতা
টান দিয়ে চীর্ণ-বিচীর্ণ* করে
           নেমে আসে, চলে আসে
           মাথা তুলে উঁচু করে দাঁড়ায়
           নতুন সভ্যতা।


ছলাৎছলতাকে ছাপিয়ে, ঝিরঝিরে কম্পমানতাকে
বিস্রস্ত করে……
ঝিক ঝিক করে ছুটে আসে গতির গাড়ী-রেলগাড়ী।
আমার আবহমান গতি, আমার গন্তব্য, আমার গাথা
বদলে দিয়ে-
        বন্দর ছুটে আসে নগরে
        নদী ছুটে আসে রেলট্র্যাকে, প্লাটফরমে
        মহাতরু ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে
        বুক পেতে দেয় প্রসন্ন পাথরে, সারি সারি
গড়িয়ে গড়িয়ে আসে সময়ের দ্রুতযান-রেলগাড়ী।
        আসে যাত্রী, আসে নাবিক
        আসে কুলি, আসে গায়ক
        আসে শিল্পী, আসে কারিগর
        আসে কুষ্ঠ রোগী, অন্ধ ভিখারী
আমার দেহাতী হাটবার হুমড়ী খেয়ে পড়ে নগরে।
মানুষ বাড়ে, বাড়ে গতি, বাড়ে চাহিদা, নতুন গড়ন,
কী দিন, কী রাত, কী দুপুর, কী সন্ধ্যা,
        সারাটিক্ষণ ব্যস্ততা নিদারুণ।


৩.
আবার হানা দেয় স্বপ্ন, যা ছিলো আমার অনুষঙ্গী
শৈশব, দিন, ফুলেল সকাল, রাশ রাশ শিউলী ভরা পথ
কোঁজা ভরা শাদা-হলদে ফুল, অথবা কাশের বন-শুধুই শাদা
কে যেন কোনদিন পুজোর মঞ্চ থেকে তুলে আনা গাঁদা
গুঁজে দেয় হাতে, কোন এক কুয়াশাভরা ভোরের
অদৃশ্যমান অস্পষ্টতাতে, পুকুরের পাড় ঘেঁষে, কার্তিকের শেষে
অথবা পৌষের সীমানায়; সে হারায়, হারায়ে যায়
কোথায়, পৃথিবীর কোন চেনা-অচেনা দুর্গমতায়,
সিন্ধু বা কোনারক, পালমীর বা বিশাখায়।


কখনো পাই তাকে, জলসিঁড়ির পাশে, গৌড় বাংলায়
আবার হারায় সে,
ফিরে আসে জোছনামাখা কোন রাতের পৈঠায়
আমার নিদ্রা-ঘুম, দু’চোখে চুম, বাঁশের বাগানের পাশে
বেজী আর তক্ষকের ছুটে চলা-মিলে মিশে নতুন
বর্ণিল বা জলরং চিত্রপটে, এমনো দুর্ঘট ঘটে, একবার, কতবার;
স্মৃতির আঙিনা, কত শত চিত্রপটে কোলাজ
কতবার আমি ছুটে যাই নদীর তীরে, যেখানে নৌকা বাঁধা
খুব ভোরে জেলেরা, সারারাতের শিকার মাটিতে নামায়।
ফিরে আসি চোখ ভ’রে শূন্যতা-হাতের কাঁকন-রুলি
                     পায়ের সাথে মিশে থাকা ধুলি
                     ধুয়ে যায় দেহাতী কুয়োতলায়।
করবী ফুলের রং মনে ধরে, বীজগুলো আরো টানে
তবু বার বার ফিরে আসে মন তুলসী তলায়;
                     অপেক্ষার বিষ, উনুনে পোড়াই।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//১৬ জুলাই ২০১৫; বৃহস্পতিবার; ০১ শ্রাবণ ১৪২২//ঢাকার জীবন