অমল ধবল জোছনায় ভরে থাকে রাতের উঠোন
নারকেল পাতার আঙুলের ফাঁক গ’লে বয়ে যায় ঝিরঝিরে হাওয়ারা কত!
শেয়ালের তারস্বরে চীৎকার, স্বাধীনতার ঘোষণার মত
আঙ্গিনাময় ছুটোছুটি করে, জোছনা ধোয়া শরতের রাত ভ’রে।


ছায়া ছায়া কায়াগুলো কান্নার মতো করুন স্বরে
কাকে যেন ডাকে, কার কাছে যেন করে নিদারুণ মিনতি,
গুমোট ঘরের ভিতরে কোন হাওয়া খেলেনা, গরম ভাপ ওঠে শরতের রাতে
খুলে দিই জানালা, সবগুলো শার্সি, কল্লোলিত শিশুরা যেন হেসে ওঠে একসাথে।


তুমি এসে দাঁড়াও পাশে, হাত রাখ মাথায় আমার, ঝরে পড়ে সহস্র আশির্বাদ
চোখ তুলে দেখি তোমার চোখ, তোমার বন্ধ দু’টি চোখ, ধ্যানমগ্ন
নয় কোন খেদ, নয় কোন ব্যথা অথবা বুকভরা শোক-কিছু নেই
তোমার মুদ্রিত চোখে, শুধু রাতভর খেলা করা হাওয়ার হাহাকার মুরতি।


তুমি নেই কতকাল, একা আমি ঠেলে যাই জীবনের ভাঙ্গা গাড়ি-
যতটা পারি, কত কত রোগ-ব্যাধি এসে ভীড় করে, তুমি কিছু বলোনা, বলতে
পারোনা বুঝি, না বলা স্পর্শ থেকেই সব কথা এসে ঢেউ তোলে
আমার করোটিতে, আমি আলগোছে তোমার স্পর্শকে ভেজা ঠোঁটে চুম্বন করি।


তুমি এলামেলো কর আমার আধেক পাকা, আধেক কাঁচা চুলগুচ্ছ
ছুঁয়ে দাও চিবুক আমার কাঁপা কাঁপা আঙুলে, তারপর ফিরে যাও আলগোছে
নিঃশব্দে পা ফেলে; কিছু দেখোনা, কিছু বলনা, চাওনা কিছুই,
বড় ক্লান্ত আর রোগা রোগা পদক্ষেপে রাতের পৈঠা পিছনে ফেলে, অন্ধকারে।


মা এসে কখন দাঁড়িয়েছে পাশে দেখিনি এতক্ষণ, সহসা নিঃশ্বাসের শব্দে
ঘুরে দেখি তাকে, আধো আলোয়-‘‘কি হয়েছে খোকা, কাঁদছিস কেন?’’
‘‘কিছু না মা’’ কিছু বলতে পারি না তাকে, কে আমার অস্তিত্ত্বজুড়ে
সারাক্ষণ ছায়া হয়ে থাকে বলতে পারি না,
কে আমাকে স্বপ্নে-জাগরণে অনুসরণ করে, কিছু করতে গেলে
সঠিক পথের নিশানা দেখিয়ে দেয়-বলতে পারি না- সেও এক বুনোঝড় যেন।


পিতা তুমি এভাবে আমার প্রতিটি মুহূর্তে ছায়াসঙ্গী কেন, কেন আমাকে
ছাড়তে পারো না একা, কেন আমাকে আগলে রাখো উন্মন ঝড়ো হাওয়া থেকে?
কেনো ঢেকে রাখো আমার নিদাঘের পথ শরতের মেঘ হয়ে, কেন সরিয়ে দাও
মনের আষাঢ়-শ্রাবণ ধারা, ভাসিয়ে রাখো পালতোলা খেয়ার মতো?


অশরীরী হয়েও কেন বসবাস করো আমার দেহমন চেতনায় অতিশরীরীয় হয়ে,
কাল থেকে কালান্তরে।ছাড়তে পারো না তোমার এই সন্তানকে একদন্ডও!
একী ভালবাসা, পুত্র প্রেম নাকি-অবলম্বন, অবিরত।
কে আমাকে বলে দেবে, কে আমাকে খুলে দেবে রহস্যের এ অবগুণ্ঠন যত।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//১ আগস্ট ২০১৫; শনিবার; ১৭ শ্রাবণ ১৪২২ //ঢাকার জীবন