স্বপ্নের মতো, ছবির মতো, কত শত কল্পনার মতো
নিখাদ, নিটোল এক ঢেউ ওঠে
কান্নার মতো সশব্দে আছড়ে পড়ে
বুকের মাঝখানটাতে, তীব্র আর্তনাদ
প্রতিরোধহীন, ভাঙ্গে সহ্যের বাঁধ।


জীবনের যেটুকু সঞ্চয়, যেটুকু অব্যয়
তারই, এই এক ক্ষয়, মেনে নিতে হয়।


কৃষ্নচূড়ার মিহিন চিরল অজস্র পাতা
ঝির ঝিরিয়ে ঝরে, মৃদু ঝড়ে মুখের উপর
সরিয়ে দেবার সাহস-শক্তি-ইচ্ছা-প্রণোদনা
একবারও জাগেনা ভেতরে, এমনই স্থবির হয়।


চৈত্রের কোন দুপুরে যখন প্রথম বৃষ্টি নামে
ঝলসানো রোদে তাপে-ভাপে ভিজে একাকার হয়
স্বেদবিন্দু স্রোত হয়ে কুলকুলিয়ে নামে, চিবুক বেয়ে
চোখের কোণায় জমে ওঠে, কারো, রূপালী মুক্তা
অশ্রু বিন্দু বা অব্যক্ত কথামালার মতো
তেমন করেই-
এখনও ভিজে চলেছি এক অন্তহীন গন্তব্য-মুখী।


জানি না, জানো না, কী এক দুরত্বকে ভালোবেসে
বুক বেঁধেছি, স্বপ্নের উঠানে কল্পনার বীজ বুনে
ছবির শস্য প্রার্থনায় নুব্জ হয়েছি
                 মৃত্যহীন যন্ত্রণার বেদীতে।
কোন প্রশ্বাস নেই, কোন উপত্যকা নেই
নেই কোন পাথুরে চড়া, শুধু আছে
দিগন্তের মতো আশা এক, এই তো শুধু-এক চাওয়া।


চারপাশে পৃথিবী ভর্তি নানান রেস-এর মানুষ
কান পাতলেই শুনি, শব্দেরও সংকট নেই-আছে শব্দ
হাসির, কান্নার, উচ্ছ্বাসের, শীৎকারের এবং বিরক্তির;
কিন্তু সেই একটি প্রার্থিত শব্দ যেনো
এখনো জন্মেনি কোন মাতৃগর্ভের নিভৃতে।


সব আছে-
চলার মতো কালো বিটুমিনে ঢাকা জনপথ
চোখ মেলে রাখবার মতো পৃষ্ঠা বা পর্দা
ব্যবস্থা আছে শরীরটাকে কাঙ্খিত অবয়বের
ঐচ্ছিক গড়নের বিধিবদ্ধতা, সৌন্দর্য্য, কথিত, প্রক্রিয়ার ভেতরে।


আরো আছে,
গুণগুনানো পাখিরা, রিনিঝিনি কাঁকনেরা এবং
ডানা ঝাপটানো বা লম্বাগলা সারসের মতো যারা;
শুধু নেই---তারাদের মিছিলে একটি তারা।


অনেকবার, অনেক তৃষিত চোখে খুঁজেছি
অনেক অবাধ্য পেন্সিলে বিচ্ছিন্ন আঁচড়ে খুঁজেছি,
অনেক রঙের জমকালো আঁচড়ে পুরু হয়ে ওঠা
ক্যানভাসের বুক পিঠ বা অনেক কলম ক্ষয়ে
নিঃশেষ হওয়া পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জমিয়ে সম্মীলিত অক্ষরের পাহাড়-চূড়ায় বসে
নমিত এক সবুজ অরণ্য দেখেছি-
মেলেনি তার নিশানা-ঠিকানা।


এই যে এক দুর্লভ তারা-অবয়ব-ছবি
যার দৃশ্য কোনদিন চোখে সূর্য্যর মত জ্বলজ্বলে না হোক
জোছনার মতো বিনম্র হয়েও ফোটেনি।


তবু অবাধ্য হয়েই জমে ওঠে
বুকের সেইখানটায় তার ছড়ানো ছিটানো অনুভবগুলো।
হয়তো এ অনুভব কোন দুঃখ নয়, নয় কোন সুখও
তবুও তো একটা বিমূর্ত উপস্থিতি তার সর্বক্ষণ।
সেটাই তো—অবিনাশী সময় রচনা করে।
        এর কোন শেষ নেই
        এর কোন অনুবাদ নেই
        এর কোন ভাষা নেই
এবং কোথাও নেই, তবু, আছে কোন একখানে
সেইখানটাতে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত।।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//অবিনাশী সময়


০৮ আগস্ট ২০১৫; শনিবার; ২৪ শ্রাবণ ১৪২২।