মাদারীর কত খেল, হাতি-ঘোড়া ডোবে যেই, খুনীদের নেয় আশে পাশে
চৈনিক কুড়াল আর কুংফু-কারাতের খেল, নান চাকু ছড়ায় সারাদেশে।
তরুণ যুবক যারা, ছিল খুব গোবেচারা, সহসা কোন মন্ত্রবীজ পেয়ে
মহান হিংস্রতা এক চেপে ধরে কন্ঠনালী, অকারণে মারতে আসে ধেয়ে।
জনগণ ব্যাকফুটে যায়, পুরান পথেই দেশ, হাঁ-না ভোটে আমিই সর্বসেরা
মাটির সুমহান ডাক, উপজেলা জিন্দাবাদ, ঘরে ঘরে লাখোপতি গড়া।
মাদারীর শেষ আছে, পরাজয় ছোটে পিছে, জাগে মৃত, প্রাণ অনির্বাণ
আমি তুমি এক পথে, শ্লোগানে শোভিত পথ, বুকে-পিঠে গণতন্ত্রের গান।
শহীদে ভরেছে দেশ, এত ভেজা মাটি দিয়ে গড়বো মুক্তির সোপান!
বেহায়া পালিয়ে বাঁচে, নির্লজ্জ খেমটা নাচে, ভেকধারী নিরপেক্ষ নাম
কেড়েছি প্রাণের পুষ্প, কেড়েছি বাঁচার অস্ত্র, কেড়েছি বাজী, চাই দম।
জনগণ উজ্জীবিত হয়, আবেগে টইটুম্বুর পথ, জনমত ছিটকে চলে যায়।
এত ট্রমা এত ঘাত, ধকলে বিক্ষিপ্ত মন, কেন সেটা গোকুল ছুঁ’তে চায়।
তুমি পাশ আমি ফেল, ক্ষতি নেই আমরাই, ত্রিকন্যার দু’জনেই আছি
দু’হাতে শব্দ তুলে, নষ্ট দিনের কষ্টগুলো, ভুলে তাড়াই নোংরা ঘাটা মাছি!
  
আবার আঁধার নামে, করতল ভিজে ঘামে, দুরত্ত্বের দুর্গন্ধ ক্রমে বাড়ে
আবার চায়ের কাপে, প্রবল তান্ডব ওঠে, পাশ ফেল অয়ি চক্রাকারে।
তোমাকে প্রস্তুত করে, শিখন্ডী তুলে ধরে, নতুন মোড়কে পুরে ফেলে
আদুল কোমল পায়ে, মখমলে ধরা দিলে, বড়শীর ছিপে গেঁথে গেলে।
পিছনের কুশীলব দল, করে ওঠে কোলাহল, বিনাশের শেষাঙ্কে তারা খসা!
তোমার প্রশ্রয় ধরে, কালো ছায়া ওঠে নড়ে, আহ্লাদে আটখানা দশা।
পান্ডোরার বাক্স খুলে, জরা ব্যাধি বেরিয়ে পড়ে, সত্যকে কর মাজা-ঘষা,
কি ভেবে সম্মতি দাও, ইতিহাস মুছতে যাও, ইতিহাসের নির্মম তামাশা।
মিথ্যে তারিখ আসে, সাতাশের ঘোষণা পাঠে, ঘটেনি যা মার্চ ছাব্বিশে,
মুছতে সত্যের আলো, একপাল জ্ঞানপাপী, ইতিহাসকে নীল করে বিষে।
জ্ঞানপাপী এই দল, জন্মের নতুন দিন, খনি থেকে খুঁড়ে তুলে আনে
এসব লুকোনা কালো গিলে খায় শত আলো, শোকদিনের উচ্ছ্বাস বানে;
মিথ্যা জন্ম-কেক, মিথ্যে মোমের আলো, ছুরি চলে অজানা কার বুকে।
কফিনের কালো দেহে ঠুকেছে পেরেক তারা, তুমি ভাসো মিথ্যা মহাসুখে।


তোমাকে এনেছে যে, ক্ষমতার মসনদে, তোমার বুলেটেই তার শেষ,
র‌্যাফ নাকি র‌্যাট হবে, ক্লিনহার্ট করা হবে, চিরুনী সন্ধানে কাঁপে দেশ।
তুমি দেখ চোখ মেলে, নালায়েক কথা বলে, ঘাতকের সঙ্গে মেলবন্ধ্
জন্ম নাকি এক বৃন্তে, লাহোর-করাচী-সিন্ধে, ইসলামাবাদীকে পছন্দ্।
বাংলার সম্পর্ক সব, হয়ে ওঠে মৃত-শব, পাকমনা সম্পর্ক জোড়ে
বৃহৎ অবোধ শিশু, নালায়েকে হয়ে ওঠে, নষ্ট বোধে নয়া তত্ত্ব ছোড়ে।
পল্টনে ঘাতক সভা, সেখানেই মুসাবিদা, শান্তির জন্য শক্তি প্রয়োগ নীতি,
ঘাতকেরা মুচকি হাসে, দেশ কাঁপে মহাত্রাসে, ফিরে আসে ত্রাসনের রীতি।
দক্ষিণ পন্থায় যারা, দেখতে কেমন তারা, তারা নয় খবরের কেউ
তবুও তাদের হত্যা, করেছে তোমার র‌্যাব, চলেছে অকাল মৃত্যু ঢেউ!
কাদের দরকার হলো, বামপন্থীর লাল রক্ত, বাংলার এ সবুজ কাদা জলে?
শ্রমজীবির মুক্তির পথ দেখায় যে মানুষেরা, তাদেরকে কারা বধ করে?
জাতীয় পতাকা-লাল সবুজের এ কী হাল!-ঘাতক গাড়ীতে কেন ওড়ে?
কাহাতক স’য়া যায়, ঘাতকের আস্ফালন, দেশ ঘুমে পাকি’র নিগড়ে।


জাহাজে-ট্রলারে ভ’রে, কর্ণফুলী নদী-তীরে, ট্রাক ভরা অস্ত্রের চালান,
রাজশাহীর দুর্গাপুরে, বাগমারা, হবিগঞ্জে, বগুড়ায় মেলে তার সন্ধান,
মুক্তাগাছা, সাতক্ষীরা, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, রাঙ্গুনিয়া, যমুনার চর,
ঘাতক চাঁদোয়া ওড়ে, তোমার আস্তিনের তলে, স্বাধীনতা হয় মর মর।
সহস্র গ্রেনেড নামে, শান্তি কামী বাংলাদেশে, কেউ কোন দোষ করেনি
বাঙ্গালী নির্দোষ ছিল, ক্ষমা করে দিয়েও ছিল, তুমি তার মর্যাদা রাখনি।
গ্রেনেডে বিদীর্ণ দেশ, চার্চ-জনসমাবেশ, নারায়নগঞ্জ বা কোটালীপাড়া
প্রথম যশোরে ফাটে, বৈশাখে বটমূলে, সিনেমা হল কিংবা যাত্রা পালা।
কোথায় ফাটেনি বোমা, বরিশাল- ময়মনসিংহ, আমাদের মাথার উপর
বৃষ্টির মতো করে, গ্রেনেড বর্ষণ করে, ভরে তোলে পাপের আসর।
মরেছে আইভী খালা, বেড়েছে অন্তর্জ্বালা, চোখ-কান বাকি আছে আর?
হানিফ, জলিল গেছে, মাহবুব মরেছে আর, মাহবুবা জীবন্ত স্প্রিন্টার,
সহস্র আওয়ামী কর্মী, বাস করে কী দুঃসহ, স্প্রিন্টার থেকে মুক্তি চায়
তাদের কান্নার ধ্বনি, দীর্ঘশ্বাস সর্প হয়ে, তোমাকে শাপান্ত করে যায়।
পারবে কী মুক্তি দিতে অসহ্য যন্ত্রণা থেকে, এটাও তো রাজনীতি, না?
তোমাকে এমন করে, কেউ যদি বোমা মারে, তখন যেন কথা বোলো না।


সবশেষে সারাদেশে, একযোগে সব জেলাতে, বিস্ফোরণে কিছু টের পাও?
তারা আছে দেশজুড়ে, বাঁধা আছে একসূত্রে, গদি দেয়ার প্রস্তুতি নাও।
মানি না তোমার ধারা, বুঝিনা আল্লাহ্‌ ছাড়া, তাগুতি আইন বন্ধ করো,
বাংলাদেশ আধমরা, বন্ধ করো জঙ্গী ধরা, মানে মানে কাঁধে তুলে ধরো।
ঝিনেদায় এজলাসে, বিচারক সোহেল মরে, রাষ্ট্র দেয় চোখটাকে ছুটি,
গাজীপুরে উকিলসভা উড়ে হয় দফা রফা, সেটা ছিল সে পর্বের যতি।
এ মৃত্যুর হোলিখেলা, বন্ধ করো এখন থেকে, বাংলাদেশটা বধ্যভূমি নয়।
যাদের স্বপ্ন বধ্যভূমি, তুমিও কি ওদের দলে, যদি হও সে ঘোষণা দাও!
শোননি আমার কথা, দোল বাতাসে স্বর্ণলতা, দেখি দোল খাও খুব করে,
তোমার এ উদভ্রান্ততা, অথবা অযোগ্যতা, পুরো দেশ সমাজ ভেঙ্গে পড়ে।
তোমার এ হীন কর্ম, সম্ভাবনার শেষ পেরেক ঠুকে দেয় সমঝোতার দেহে
চলেছে তৃতীয় কন্যা, মহান সে পিতার বাণী, পদতলে মাড়িয়ে ভিনগ্রহে।


এখানেই থামাতে যদি, ইতিহাসের অমোঘ গতি, এত দ্রুত পাল্টে যেত না
সে কথা শোননি, তাই ঘাতকের শিরোমনি দিতে পারে তোমাকে মন্ত্রণা,
যুদ্ধ হয়নি একাত্তরে, গৃহযুদ্ধ ছিল সেটা, ঘাতকেরা শেষ সূত্র ছাড়ে
তুমি থাক নির্বাক, ঘাতকেরা সর্ববাক, মুক্তিকামী মানুষের মন পোড়ে
এত স’য়া যায় নাই, লোক নামে রাস্তায়, নেতাদের অপেক্ষা না করে
দ্রুত বাড়ে জনমত, রুখতে বিরুদ্ধ স্রোত, কেন তুমি লাগ উঠে পড়ে!
আমি স্রোতে ছিলাম না, স্বতস্ফূর্ত আম জনতা, মাথা তুলে দাঁড়ায় সম্মুখে
ছিল সেটা জনরোধ, তুমি করো প্রতিরোধ, পরাজিত স্বাভাবিক দ্বৈরথে।


তবুও সরল পথে যেতে যদি গদি থেকে, তোমাকে কেউ কিচ্ছু বলত না
সেপথ মাড়াওনি তুমি, ভিন্ন পথ বেছে নিলে, যে পথ গন্তব্যে পৌঁছে না।
জানতে পারনি তুমি, বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ত্বে, মুগ্ধ মানুষ জীবন দিয়ে যায়
তোমার সে অনাচার, মানেনি সৈন্যদলও, এক-এগারো ঘটি উল্টে দেয়।
হয়নি গদীতে ফেরা, তুমি আমি গোবেচারা, দাঁত কেলিয়ে হাসে সাবজেল
দু’জনেই পাশাপাশি, এক ছাদের নীচে বাস, ছিল কি সবই গরল ভেল!
সময় নির্মম অতি, তোমার হয়েছে যতি, ট্রিগারের মুখে আমি থাকি
দেশপ্রেম বুকে নিয়ে, আকাশে উড়াই স্বপ্ন, সোনার বাংলায় আস্থা রাখি।


আমার তোমার ব্যবধান যেন এক অভিধান, রচনা করেছে শয়তান
যতই উড়াই পাতা, হারায় না খেরোখাতা, বার বার ফিরে পায় প্রাণ।
রচিত ভেদমন্ত্র যত, আউড়াচ্ছে অবিরত, ভেদবিদ্যায় পারদর্শী যারা
তোমোকে বেষ্টন করে সারাক্ষণ রাখে ঘিরে, আটকায় প্রাণের ফল্গুধারা।
পাপিষ্ঠ এই মুখেরা, তোমাকে উত্যক্ত করে, সরিয়ে রাখে শুভচিন্তা থেকে
অদৃশ্য রাবণ তারা তোমাকে আটকে রাখে, ছিন্ন করো কঠিন এ বৃত্তকে।
দেহ থেকে মুক্ত করো পুরাতন পাপাত্মাদের, প্রায়শ্চিত্ত করো শুদ্ধ ক্ষণে
ফেরাও অকৃত্রিম মন, শুরুর সে মাহেন্দ্রক্ষণ, ক্ষমা চাও পূত-শুদ্ধ মনে।
শুদ্ধতা প্রশান্তি আনে, প্রভাত পাখির গানে, মেলে ধরে বিশুদ্ধতার দোর
সেটাই নিয়তি হবে, ঘাতক নিশ্চিহ্ন হবে, আসবে ফিরে উদ্ভাসিত ভোর।
দু’নারীর দ্বন্দ বলে, অতি সরলীকরণ করে, সত্যের বিপরীত ছবি আঁকে,
সেটাও দুষ্ট-বুদ্ধি, ঠেকাতে চায় মনের শুদ্ধি, মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাখে।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//অবিনাশী সময়
২১ আগষ্ট ২০১৫; শুক্রবার; ০৬ ভাদ্র ১৪২২; ঢাকা।