কবিতা আজ অকামবিদ্ধ বাক্যবাণ!
যে সঙ্গম করতে জানে না সে কবিতা লিখে।
বৃক্ষ দেখে ফল দেখে তুমি ভাবো কী দারুণ, কী দারুণ!
আর আমি ভাবি কত সিএফটি কাঠ হবে, বাজারে কত দাম,
ফলে কি ফরমালিন দেয়া, কী ফল ওটা? আম?
তুমি তাই অকামবিদ্ধ পুরুষ, অথবা কবি
আর আমি সর্বাঙ্গে সেনাপতি-সকাম।


আমি কবিতা লিখি অধঃস্তনদের সাথে সভায় বসে,
স্মার্টফোনে কী-চেপে চেপে, বিশেষ সিদ্ধান্ত জানানোর ফাঁকে;
আমার কবিতা যাপিত জীবনের মানপত্র হয়ে অথবা কানের
ঝুমকো লতা বা হিজাবের ক্লিপের কোহিনূর মণি হয়ে থাকে্।
এখন আমার কবিতা বিশেষ সভার প্রধান অতিথি হিসেবে
নিজেকে মস্ত বড় জানোয়ার(অনেক জানে যে!)প্রতিভাতের জন্য
এখন আমার কবিতা গোপন লেনেদেনে বদলী-পদায়ন
চাকুরীতে যোগদান অথবা দেশে-বিদেশে মানুষ বা দ্রব্যাদি
আনা-নেয়া, আদান-প্রদান বা পারস্পরিক সহানুভূতিতে
পারস্পরিক স্বার্থ-বিন্যাস অভ্যাসের উপরে রূপসী মোড়ক;
এখন কবিতা আমার পুরাতন সময়ের পরিত্যক্ত চিন্তা
বদলে ফেলা অভ্যাস-সুচারু সমাজ ভাবনার পালমীরা।


যে প্রকৃত প্রেম করতে জানে না সে কবিতা লেখে
কবিতার ফাঁকে ফাঁকে পড়ে থাকে লালা-শ্রম-ঘাম
কাব্যের চরণের উপরে শুয়ে থাকে শিশ্নহীন কামাতুর পুরুষ
(কখনো নারী…সাহসী অথবা সাহসহীনা…ত.না.)
আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে কেবলই দেখে নারী (অথবা পুরুষ)
যাকে পাওয়া যায়নি, যাকে ছোঁয়া যায় নি, যাকে পেয়েও
ধরে রাখা যায়নি, অভ্র ভারে, ছোট্ট সাম্পানে ভরে সোনার ধান
কবিতা আশ্রয় দেয় তাকে, যাকে বাঁধা যেতো সাত পাকে,
বাঁধা হয়নি সেটা সময়ের অকল্যাণ,
আসলে সেটা বিভ্রম সমান, কবিতা হয়েছে কামের ছদ্ম নাম।


যাকে সম্ভোগ করা যায়, ঘর বাঁধা যায় না,
সে পড়ে থাকে কলমের ডগার বাইরে, যত্র-তত্র ঘোরে,
ফুটপাতে, রেড লাইটের ওপাশে অথবা যেখানে নীলাকাশ নিষিদ্ধ,
তার জন্য কাব্যের ঝরণাধারা ফল্গু হারায়।
কবিতা আজ ফরমায়েশের আরেক নাম, শোভা পায়
সমাজের কর্ণধার, হস্তধারী বা পদধারীদের পানাহার আর
সম্ভোগগীতির আলেখ্যানুষ্ঠানের বর্ণিল পোষাকী আয়োজনে।
কবিতা তাই আজ বন্দীনিবাসী, কবিও আজ উপগত সেনানী।


আমার দু’হাত ভেঙ্গে, আর দু’পা গুঁড়িয়ে
কবিতাকে মুক্ত করা চাই, ওহে কবি ভাই
কবিতাকে শৃঙ্খল থেকে ছিন্ন করে, বাজারের ফর্দ হতে সরিয়ে
সকামকবি বা অকবিদের খপ্পর থেকে মুক্ত করার দাবী
শিউলীর মতো তোমাদের সকল কুয়াশার্ত ভোরে ছড়িয়ে যাই।
কবিতার মুক্তি চাই।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//অবিনাশী সময়
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫//শনিবার//২৮ ভাদ্র ১৪২২//ঢাকা।