সমসাময়িক ৪


আমার এই এক দোষ, কথা ইনিয়ে বিনিয়ে
পেঁচিয়ে-পচিয়ে বলতে পারিনা। বন্ধুরা নাখোশ হয়,
প্রিয় জনও মনে মনে জল গরম করতে থাকে
সুযোগ পেলেই ঢেলে দেবে, সে সব বুঝেও
অভ্যাসের গরম দুধে চাল আর চিনি ঢেলে সুমিষ্ট পায়েশ
করে তুলতে পারি না; কী আর করা!


ধরুন, সংস্কারমুক্ত মন নিয়ে সকালে চলতে শুরু করেছি
নিজের পায়ে ভর করে, তারপর একে একে অনেক ঘটনা।
গলিপথে বেরোতেই পাশের বাসার তেতলার ভাবির
রান্নাঘরের পবিত্র পানি গায়ে পড়ে, সফেদ ভাঁজ করা শার্ট
একটু রঙীন হলো, অসুবিধা কী? খুশি মনে সামনে এগোই।


রিক্সাওয়ালা খুঁজছি, ফিরতি পথে তারা,
সারারাত খ্যাপ শেষে ফিরছে ঘরে, আমার পথে কেউ যাবে না,
অসুবিধা নেই..অপেক্ষায় আছি; অনেক পরে একজন রাজী
দশ টাকা বেশি দিতে হবে, অসুবিধা কি?
চাইলে দিব না! এটা তো রিক্সা রাজের দেশ!


রিক্সা চলছে, ট্রাফিক জ্যাম, অনাবশ্যক হর্ণ,
রিক্সা যাবার বামের লেনে সিটি সার্ভিস দাঁড়িয়ে, রাস্তা ব্লক।
অসুবিধা কী! এটা তো ফাইভ পাশ ড্রাইভার আর
এইট পাশ পুলিশের দেশ! তারাই তো রাস্তার রাজা।
তার হাতই সিগন্যাল, তার হুইসেলই ঈশ্বরের নির্দেশ।


সামনে জ্বলেছে লালবাতি, এখনি বাজবে পুলিশের বাঁশি,
গাড়ী ছুটবে-রিক্সা বিদায়,‘‘ডাইরেক্ট লোকাল সার্ভিস’’এর যাত্রী।
যেখানেই যান ডাইরেক্ট বিশ টাকা, অসুবিধা কি?
আজকাল বিশ টাকায় কিছু হয়!পটল-বেগুন-মুলা,
সবার কেজি ষাট টাকা, এক কলা দশ টাকা,
ভাড়া তো বাড়বেই।নতুন পে-স্কেল আসছে, তখন পঁচিশ হবে।
বাস ড্রাইভার তো সচিব নয় যে সে
আশি হাজারে অতি কষ্ট করে বাঁচবে!
গাড়ী সবখানে থামছে, লোক উঠছে, মাথার উপরে
হাজার মুখ, বেচারা!অসুবিধা কি?
সবারই তাড়া, কাজে যেতে হবে না!


রাস্তার পাশে লোক নেই, অথচ বাস থামে,
ব্যাপার কী!টিকেট চেকার, আসলে যাত্রী গুণে দেখা,
সেটাও না, আসলে কাগজে সই করে অতিরিক্ত যাত্রীর জন্য
মাথা পিছু বখরা তোলা; অসুবিধা কী!
মালিক তো আর বেতন দেবে না, চল্লিশ সিটের
বাসের চল্লিশ জনের ডাইরেক্ট ভাড়া মিটিয়ে
অতিরিক্ত যাত্রী ভাগ করে নেয়া
বেতন সেখান থেকেই আসবে, ‘‘সাম্যবাদ জিন্দাবাদ’’।


হঠাৎ হুইসেল..রাস্তা বন্ধ্। কেন? সিস্টেম। ভিআইপি যাবে।
পুলিশের আইজি-ডিআইজি গেলেও রাস্তা বন্ধ,
সচিব হিংসা করে-বিচারপতি অহিংস,
নির্দ্বিধায় ডানের রাস্তা দিয়ে লং ড্রাইভ
বা রং ড্রাইভ করে যথাসময়ে অফিস-এজলাশে পৌঁছে
জনগণ শেখ হাসিনার শাপান্ত করে;
এবারই প্রথম ভিআইপি’র জন্য রাস্তা বন্ধ্ হচ্ছে;
এই চীজ জনগণ আগে কোনদিন দেখেনি!
আগে ভিআইপি হয় আসমান নয়, পাতাল (স্যুয়ারেজ লাইন,
এটা ছাড়া বুড়ীগঙ্গা পর্যন্ত কোন ডাইরেক্ট লাইন নাই)দিয়ে
অনায়াস যাতায়াত করতেন; থেমে আছি মাত্র সাতাশ মিনিট।
সাইরেন বাজে, সামনে দিয়ে ভুস করে বেরিয়ে যায়
কয়েক ভিআইপি’র গাড়ী; তারপর ‘‘চলছে গাড়ী, যাত্রাবাড়ী”।


মাত্র পঁতাল্লিশ মিনিট দেরি তখন, কে দায়ী?
অফিসের বস, কাজের মালিক এসব বোঝেন না
‘‘আপনারা ভিআইপি সড়ক দিয়া চলেন ক্যান,
আমার মত আন্ধা গলিতে থাকবার পারেন না!’’
লেট প্রেজেন্ট, তিনদিনের দেরিতে একদিনের বেতন কাটা,
মেজাজ তখন খাট্টা।কাজে খিটি মিটি, ভেবেছি
যে কাজ করবো, সেটার উপর অনেক নতুন কাজ, চাপ
শার্টে বিজাতীয় গন্ধ, জুতার উপরে শতেক পায়ের ছাপ,
সংস্কারমুক্ত মনে সংস্কারের ঘনঘটা, বেলা বাজে বারোটা।


ফাইলে বসের সিল, সই দিতে ভুলে গেছেন, তাড়া
তাকে আজ পাওয়া যাবে না, তিনি এখন সেমিনারে,
কাল কখন আসবেন? বলা যাচ্ছে না, এলাকায় যাবেন,
সেখানে ‘‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’’ এর শোভাযাত্রা;
(চামচামির আর শেষ নাই) মাথায় চাপ বাড়ে।
সেই চাপে আর বিকেলের ভাপে, আবার যানজটের ঢেউ
ঠেলে বাড়ী পৌঁছতে হবে, তাড়াতাড়ি ঘুমুতে হবে
আবার ছুটতে হবে সকালে; কী আর করা!


ইনিয়ে বিনিয়ে পেঁচিয়ে-পচিয়ে বলতে পারিনা,
এই আমার ধারা, সোজা সাপটা-পাটি সাপটা,
গণ্যমান্য, বিবেক হারা- আমাদের এই জীবনধারা;
আমরা সবাই সারমেয় শাবক, তোমরা হলে বাবা-মা রা।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//অবিনাশী সময়
ইং ০৫-১০-২০১৫; সোমবার; ২০-০৬-১৪২২ বাং