১. স্বাধীনতার কবি


প্রিয় প্রেমিক পুরুষ, প্রেম মানেনি প্রেমের আদর্শ লিপি
পাখিসব কত রব করেছে, পুকুর ঘাটে, জলের ঢেউয়ে
সন্ধ্যা রাতে, যুদ্ধ প্রাতে, দৈনিক বাংলা, সাহিত্য পাতাতে।


কখনো কলম দিয়ে ফিনকি ছুটেছে, ভালবাসার বাংলাদেশ
কখনো আতঙ্কে শউরে উঠেছে প্রেমিক অন্তর, তাও কত বছর!
ত্রিশ কি পঁয়ত্রিশ হবে, যা বলেছিলেন কবিতার চরণে
আজ আদের চরণে তা সত্য, শিকল আগাছার মত বেড়ে উঠেছে।


উদ্ভট উট আজ ঘর দোর মন্দিরে স্থান করে নিয়েছে
মননে, মগজে, ওয়েবে কাগজে সর্বত্র সরব বিচরণ
কিভাবে বুঝলে কবি, আমাদের সম্মিলিত আচরণ পাল্পে যাবে,
জোছনার দুধ ঢালা চাঁদ, আকাশ থেকে পানসে আলো ছড়াবে
সবুজের মখমল জমিন জুড়ে, আজ থেকে এত দূরে বসে!


তোমাকে আজ প্রয়োজন খুব জাতির, বুঝি শিরায় ও শিকড়ে
বেজন্মাদের করোনি কোন খাতির, আজকাল লোকে যা করে
সাহসে দু’কলম লিখে, আত্ম-সমর্পণের পা ধরে;
তার দলে পড়েনি তোমার পা, এজন্য তোমার শরীরে দেখেছি
ঘাতকের কৃপাণ, রক্তে বিধৌত শ্যামলীর ছোট্ট টেবিল চেয়ার ঘর
মহীষাশূর এর মতো নব্য ঘাতকেরা বিদীর্ণ করে চলে
বাংলার উঠোন মগজ; দেহ জুড়ে, চিন্তা জুড়ে বিজাতীয় কদর্য ঘা।
ফিরে এসো কবি আপনালয়ে, একবার, শুধু বলে যাও
কিভাবে পরিত্রাণ পাবে এই বাংলা, পতিত ঘাতকের জারজদের
নষ্ট বীজের বিনষ্ট চারা শস্যক্ষেত্রের দ্রুত ঢেকে যাওয়া থেকে।
ফিরে এসো, বলে যাও স্বাধীনতার কবি, আমরা আপেক্ষায় আছি
সেই করে থেকে! আজ কবির এই জন্মদিনে অসম্ভব স্বপ্ন আঁকি, চোখ মেলে দেখি কবি হাসছেন নতুন জন্মের পদ্য হাতে নিয়ে।  


২. জীবনের আনন্দ


ছেড়ে গেছে আশ্বিনের হাওয়া, শীত শীত আমেজ
ছেড়ে গেছে ল্যাম্পপোস্টের রাত সারথী
থেমে গেছে কুয়াশার ছাযার ভিতর ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত
বিষন্ন এক রাত প্রহরী-শরীর ও মন, থেমে গেছে
আনমনে পথ চলা, কখানো শশ্মানের পাশে সন্ধানী শেয়াল
রাত-বিরাতে, কখনো নামহীন নিরাত্মীয় কুকুর।


শুধু পড়ে আছে, হাসপাতালের শয্যায় এক বিবাগী প্রেমিক
মানুষ অথবা নারী, বাংলাদেশ বা ধানসিঁড়ি বুকে ধরা
চিরায়ত বাংলার প্রকৃতির এক পরম প্রেমিক,
ভালবাসার কাঙ্গাল, জীবনের আনন্দ, কবি পুরুষ।


থেমে গেছে তার অবিরাম চলাচল, আজ এই রাতে
কার্তিকের রাতে, নিঃশ্বাস হিম হয়ে আসে, জমে থাকে বুকে
আজো বাংলাদেশ মন পেতে আছে নিবিড় মৌনতায়
জীবনের সব কোলাহলকে নিমেষেই নৈঃশব্দে নামিয়ে, শোকে।
কবির এই হঠাৎ অন্তর্ধান, চলে যাওয়া নয়, প্রেমিকের অভিমান।


৩. অবনীল-অবলোহিত


না কোন নীল নয়, না কোন লোহিতও নয়
নয় কোন নীলের উপাখ্যান, জন্ম তার এই বাংলায়
আলো হাওয়া জল, নদীর কলকল গায়ে মেখে
দুরন্ত বালক, চলে গেছে, প্রকৃতির অমোঘ টানে।


আজো কান পাতি প্রেমিক পুরুষের বুকে, যেখানে
এখনো ফোনে একশ’ আট নীল পদ্ম, তুলে আনে ঠোঁটে
বুনে দেয় ভালবাসার চোখে, ফোটে অজস্র নীরা।
তাকে আজো খুঁজে পাই যৌবনের টানাপোড়েনের গল্পে
তার ছায়া পড়ে, সে আছে সময়ের প্রতিটি পাতায়, প্রস্থানকে
উপক্ষো করে, আমাদের প্রতিটি প্রিয়তম ভোরে।


তার অবনীল অবলোহিত রশ্মি সময়কে ছাড়িয়ে  
ছড়িয়ে গেছে অনন্ত লোকে, মৃত্যুহীনতার ভিতর।
কবির শেষ যাত্রা সমাপ্তি নয়, নিজেকে কালোত্তীর্ণ করার
অভিযাত্রা। আমরা দেখি দিব্য চোখে।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//অবিনাশী সময়
২৩ অক্টোবর ২০১৫; শুক্রবার; ০৮ কার্তিক ১৪২২//টাঙ্গাইল।


বিঃ দ্রঃ        আজ কবি শামসুর রাহমানের জন্মবার্ষিকী, কিন্তু কবি জীবনানন্দ দাশ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এর মৃত্যুবার্ষিকী। প্রতিটি ঘটনাই স্পর্শ করে হৃদয়। এজন্য পরের তিনটি কবিতা। কলেবরে বড় হলেও ইভেন্ট তিনটি একই সঙ্গে হাজির হওয়ায় একই দিনে পাঠকের সামনে ৪টি পৃথক কবিতা পরিবেশন করলাম। নিজ গুণে বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নেবেন এমন প্রত্যাশা রাখছি। আপনাদের সহৃদয় পাঠ ও মন্তব্য প্রত্যাশিত। আপনাদের জন্য শুভেচ্ছা।