আমার জীবন মুক্তির রঙে নীল করে দাও প্রিয় প্রভূ
যেখানে হাসবে ভোরের ঘাসে শরত শিশির শিউলী ফুল
এই পৃথিবীর প্রান্তর জুড়ে মুক্তির এই নতুন ভোর
জন্মই আমার আজন্ম পাপ প্রমাণিত হোক সেছিল ভুল।


আমার মনের প্রজাপতি যত ফুলে ফুলে যেন খুব ওড়ে
বেড়ে উঠবার সবটুকু রেণু ভোমরা যেন না নেয় শুষে।
দেহ মন আর চিন্তারা যেন নিজ নিজ রঙে রেঙে ওঠে
শৃঙ্খলের এই কদর্য্য রূপ দেখে যেন আমি উঠি ফুঁসে।


মানুষ জন্ম যেন হয়ে ওঠে মানুষের মত আগা গোড়া
আমার জীবনে চারটি দেয়াল চার কিতাবে কেন মোড়া!
আমার জীবন যদিও সবাক তবুও মানুষ নামেতে ভয়
পায়ের তলায় মাটি-ঘাস নেই আকাশও সেখানে চাঁদোয়া নয়!


কবে যেন ছিল পূজোর ছুটি, ভূতের গল্প মাঝরাতে
শেষ কবে যেন হেঁটে গিয়েছি প্রিয় নদীটির কাছটাতে
নানান রঙের পোষাকে-টুপীতে-রুটিনে শৈশব ঢাকা থাকে
আমার জীবন আটকা পড়েছে বড় হুজুর আর ট্রাঙ্কটাতে।


একরত্তি এই জীবনে আমার আছে যত কিছু ভুল-ত্রুটি
ভুলে ভরা এক আজব মানুষ শেখাবে সঠিক শুদ্ধ-রীতি
কিভাবে হাসব, কিভাবে কাঁদব, সালাম দেব কেমন করে
ভাবব কিভাবে এই মানুষটি সেটাও শেখাবে হাতে হাত ধরে।


জীবন যাপন, প্রিয় বা আপন, সব শিখে দেয় এই মহামতি
মাথার উপরে ম্রিয়মান আলো, বুকে ভরে দেয় অনন্ত জ্যোতি!
তার আলোতেই বুকের দরজা আলোকিত হয় প্রতিটি ভোরে
পিতা–মাতা-ভাই, স্মৃতি মাখা ছোঁয়া, প্রতিদিন দিই দূর করে।


আযানের সাথে ঘুম ভেঙ্গে যাবে, তখনও পাখিরা ঘুম ঘোরে
আমরা উঠেছি ফযরের আগে তালিম আরম্ভ তারও পরে।
কিতাব পাঠের একঘেঁয়ে সুর, লম্বা ছড়ির চকিত ফলা
ভুলিয়ে দিয়েছে সকালের রোদে ফুলের উপরে প্রজাপতি খেলা।


পাখির কাকলি, আকুলি বিকুলি ছটফট করে মনের ভিতরে
সেই আকুলি নিমেষেই মোছে বড় হুজুরের বাজখাঁই স্বরে।
সকালের খানা একসাথে হানা হাতে হাতে গ্লাস বাটি ঘটি
মার হাতে রান্না আদরের খানা, কবে খেয়েছি ভাজি রুটি!


এসব আমার স্বপ্নের চেয়ে অনেক বেশি দুঃস্বপ্ন লাগে
আমার জীবনে শৈশব মানে বাঁকা চাঁদ ঝোলে তারার আগে
মানুষ নয়তো পিপীলিকা লাগে আমার এ ক্ষুদ্র জীবনটাকে
পান্ডুর এ জীবনে আকাশ ও মাটি ঘাসফুল দেখি দূর থেকে।


সেই হুজুরের বুকের কপাট আজকে এনেছে অবাক ভোর
সকাল বেলাতে সাজগোজ করে বেরিয়ে পড়েছি সেকান্দর!
সাদা সাদা মেঘ শরত আকাশ সবুজ ঘাসের মাঠ দেখি
প্রতিদিন যেটা স্বপ্নে এঁকেছি আজকে সামনে সেটা একী!


স্বপ্ন নাকি বাস্তব সেটা বুঝতে বুঝতে সময় যায়
তবুও হুজুর অবাক করে সবাইকে এনে দাঁড় করায়
ছবি তোলা নাকি হারাম সেকথা কিতাবে রয়েছে হর পাতায়
আজকে সে পাতা আপনি বন্ধ হুজুরে তুলছে সেলফি হায়!


আমার চোখের প্রশ্ন নেভাতে হুজুর সেলফি সাফাই গায়
‘‘কি করব ভাই সারা দুনিয়ায় সেলফি ছাড়া নাই উপায়’’
একটি সকাল সবুজ মাঠ আর একটি সেলফি ডাক পাঠায়
আমরা মানুষ পিপীলিকা নই, মুক্তি আসছে ঘাস-পাতায়।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//অবিনাশী সময়
২৬ অক্টোবর ২০১৫; সোমবার; ১১ কার্তিক//ঢাকা।