১.  প্রস্থান


প্রিয়তমা গোলাপ, এখন অনেক রাত।
দোতলার বারান্দায় ঝুঁকে থাকা মুখ,
টবে গোলাপ কুঁড়ির ফুটে উঠবার অপেক্ষা, আর
জোছনা প্লাবিত নগর ঢাকা। একা দু’টি চোখ।
বারান্দায় কাগজ বিছিয়ে মোমবাতির আলোয় লিখছি,
শিয়রের কাছে, পায়েদের আশে পাশে মশাদের সুরলহরী
পাশে রাস্তায় ছুটছে দু’একটা গাড়ী, রিক্সাও।
পড়ছি নিজের হস্তরেখা এবং কিরো কি যেন বলছিল
সে সব, খুব নিবিড় মনে। তখন...


রাস্তার ওপাশের দোতলার বরান্দার আলো নিভে গেল।
লোড শেডিং? না। এখানে এখন থেকে তিন ঘন্টা
বিদ্যুৎ নেই, তবু চোখ ডোবে নিকষ অন্ধকারে।
যে মেয়েটি প্রতিরাতে বারান্দায় আসতো
হঠাৎ তার গলার আওয়াজ পেলাম, চিৎকারে।
ঘুমের কুয়াশায় নিমজ্জ্তি নাগরিক মহাকাব্য, বধির নিদ্রা।


অবাধ্য কান কত কিছু দ্যাখে, যদিও প্রিয় চোখ
নিকষ নৈঃশব্দে তুষারিত।
তারপর দোতলার সেই কক্ষে আগুন, দ্রুত নিভে যায়।
সদর দরজা খুলে রাত তিনটেয় বেরিয়ে যায়
একটি কালো কার, নৈঃশব্দ ছারখার।
রাত ফিকে হয়ে আসে, কিন্তু বারান্দায় সেই মুখ
আর আসে নি। এখনো ধানমন্ডী পনের নম্বর ডাকে।
কিন্তু দোতলার গোলাপ চারা আর ফোটেনি।


প্রিয়তমা ফুল একজনমে আর ফোটা হলো না।


২. পুনরাগমন


সময়টা তখন অনুকূলে ছিল, তুমি ছিলে না।
ধনুকের ছিলা টান টান করে করে তীর ছুঁড়েছি, শূন্যে
কত শব্দ শেল ছুঁড়েছি অপ্রত্যাশিতের মতো প্রত্যাশিত কানে।
কত আয়েশী রাত বয়েসী করে তুলেছি প্রতীক্ষায়, আকাঙ্খায়, ধ্যানে।
কোন গৃহমন্দিরের পাতাবাহরের রং-এ সাজিয়েছি  
কোন দেবীর পাদমূল-অাবেগের অর্ঘ্য, বানের পানির মতো কেবলই
গড়িয়ে গেছে, সময়ের সাগরে, প্রার্থনায় দেবীর কৃপা হয়নি।


তারপর পেরিয়ে এসেছি এক লক্ষ গোলাপ ও রজনীগন্ধা
তারপর ডিঙ্গিয়ে এসেছি সহস্র র‌্যাটল স্নেকের ঝুনঝুনি
রক্তাক্ত করেছি কত বুনো লতার কচি কোমল ডগা
পুড়িয়ে দিয়েছি কত সময়ের কথকতা, কথামালা, একাকী।


আজ অবলোয় হঠাৎবন্ধ দরজায় কোমল হাতের মৃদু আঘাত
আঙ্গুলের বিলি কাটার শব্দ মসৃণ পাটাতনে, আলতো করে
হঠাৎ শীতের শিশির গন্ধমাখা বাতাসে দহনের গন্ধ ভাসে,
বুক ভরে শ্বাস নিতে যাই, ফিরে আসে শূন্য হাঁপর, অক্সিজেনের
নিদারুণ কষ্টে রক্তাভ ঠোঁট-জিহ্বা; অথচ এসময়ই
পিপাসার্ত হয়ে ওঠে ঠোঁট, শুকিয়ে আসে প্রাণ, কিসের কারণে!!


আমার ভালবাসার কোন ক্যানভাস নেই, তাই ছবি হয়নি কোন
আজ অদেখা অাঙ্গুল, অজানা নিঃশ্বাসের শব্দ তাই রাত্রি হনন করে।


এস, এম, আরশাদ ইমাম//স্খলিত সময়
০৬ ডিসেম্বর ২০১৫; রবিবার; ২২ অগ্রহায়ণ ১৪২২//ঢাকা।