ধীরে ধীরে বড় হচ্ছি, বেড়ে উঠছি বুবু
ভ্রুণ থেকে মাথা-হাত-পা গজিয়েছে অনেক আগে
বেড়ে উঠতে পারছিলাম না, ভ্রুণ-ঘাতক কতবার যে
হত্যা করতে চেয়েছে! তবুও জন্ম আমার হয়েছে
এবং
খুব দেখতে পাচ্ছ-কেমন পাকা পাকা কথা বলছি, তাই না?


তোমাদের অনেক দুঃখ, অনেক হতাশা, অনেক গর্ব
সেটা ছিল অস্তিত্বের সংকট, বেঁচে থাকবার টানাপোড়েন
বাঁচা-মরার দড়া-টানা খেলাও বলা যায়, অথবা সংগ্রাম;
তার ভিতর দিয়েই তোমরা মরেছ, আবার বেশ বাঁচতেও শিখেছ;
বেঁচেছ, আবার বাঁচাতেও শিখেছ, কী আশ্চর্য্য, না!


আর তারপর থেকে এই সেদিন অব্দি আমাকে শুনতে হয়েছে
আমার অক্ষমতার গল্পগাথা, আমার উন্নাসিকতার
রক এ্যান্ড র‌্যাপ ফিউশান এবং অন্তমুখীনতার নামা; যদিও
এখন ধীরে ধীরে মেঘ কাটছে, আলোর রশ্মি অলৌকিক
আলোর স্তম্ভ হয়ে মেঘ থেকে নেমে এসে ক্রমশঃ
উজ্জ্বল করে তুলছে সব, কেটে যাচ্ছে আঁধার।


সহজ কথা বলি-ভাষা থেকে স্বাধীনতা ছিল তোমাদের
সত্য রূপকথা, যাদের শবদেহের উপর তার মঞ্চায়ন
তারা যেমন সহসা বিশ্বাস করতে পারেনি, যারা অভিনয় করেছে
তারাও যেন ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি, কী করে ফেলেছে!
আমরা বুঝছি। আমরা পিতাকে হারানো, ত্রিশ লক্ষ শহীদকে
মূল্যায়ন করতে না পারা বা শিশু-নারী-ভ্রুণ হত্যাকারীদের
দন্ড প্রদান করতে না পারার দায়-গ্লানি-অপবাদ নিজ কাঁধে
বয়ে বয়ে ক্লান্ত বিধ্বস্ত হয়েছি; সক্ষমতা শব্দটিই আমাদের জন্য
যেন হয়ে উঠেছিল আগন্তুক-পাহাড় সম অবোধ্য;
আজ স্বাধীনতার পঁয়তাল্লিশে রাখার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে
সে অক্ষমতার অনেক কালি মুছে নতুন রং লাগাতে পারছি।


তোমার আর ভয় নেই বুবু-
এদেশে পরাজিতদের বিচার হবে
নতুন করে নির্মিত হবে মুক্তির সংজ্ঞা
সাধারণের ভিতর থেকে খুঁজে বার করা হবে অসামরিক বীরশ্রেষ্ঠ
অর্ধশতক পেরিয়ে যাবো যখন, তুমি পাকা চুলে মেহেদী লাগিয়ে
বসে তোমার নাতিকে বলবে, ‘‘শোন দাদাভাই, তোর দাদারা
এজিদের সাতশ’ নাতিকে বধ করেছিল, এক ফুঁয়ে।’’


উৎসর্গঃ বাংলাদেশ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ও তাদের ফেরাম            
           এবং ইমরান সরকারকে। (শাহবাগ আন্দোলনকে)
০৮ জানুয়ারি ২০১৬, শুক্রবার, ঢাকা।