চৈত্র যাচ্ছে, যাবেই তো, যাওয়াই নিয়ম, বৈশাখ আছে না!
নতুন বছর আসছে, সেটাও নিয়ম, সবাই রকমারী সাজে
প্রস্তুত হয়ে আছে, আছে না? আছে।
কিন্তু এসবের কোন মানে কি আছে প্রকৃতির কাছে?
ভালবাসাহীনতার দীর্ঘ পদাবলী শুনে প্রকৃতির কী লাভ বলো!
তার চেয়ে এসো ভুলে যাই সব ঋতু, ঋতু পরিক্রমার কথা।


বরং দ্বিগুণ উৎসাহে গ্রীষ্ম পালন ও বর্ষা নিধন করি
তারও চেয়ে প্রবল উৎসাহে শীত নিধন করে শরত পালন করি।
ভালো হয় পরশুরামের কুঠারটি পেলে, না পেলেও চলবে,
আমাদের আছে চমৎকার চাইনীজ কুড়াল, এটাও কাজের!


আমি এক হাতে হই ভায়ের হন্তারক বা মাতৃঘাতী
যা প্রকারান্তরে হত্যা করে বৃক্ষ-নদী-প্রকৃতি;
আর হাতে টেনে চলি পরশুরামের কুঠারকে-
সুদূর মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাংলা ভূমি পর্যন্ত,
ককেশাস পর্বত থেকে গারো বা ময়নামতি অথবা
আল্পস পর্বত থেকে তাজিংডং পর্যন্ত বিস্তৃত সবুজ মৃত্তিকা জুড়ে।


পৃথিবীর ভাঁজ করা মানচিত্র একবার খোলো, তাকাও,
দেখ সুদূর মঙ্গেলিয়া বা চীনের ইনার মঙ্গোলিয়া থেকে শুরু করে
গানসু,  ‍নিনজিয়া, শানজি, জিংহাই, জিনজিয়াং এবং
তিব্বত, কিরগিজিস্তান, তাটিকিস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান,
ভারতের ঝাড়খন্ড, গুজরাট, রাজস্থান, কাশ্মীর থেকে
সমগ্র পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক ইরান, সিরিয়া, জর্দান,
তুরস্ক, লেবানন, ইসরায়েল বা ফিলিস্তীন, সৌদী আরব
কয়েত, বাহরাইন, অমিরাত, ইয়েমেন বা ওমান
মিশর, সুদান, লিবিয়া, চাদ, তিউনিসিয়া, নাইজার,
নাইজেরিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, পশ্চিম সাহারা
মৌরিতানিয়া, কেনিয়া বা সোমালিয়া
আবার যদি দৃষ্টি সম্প্রসারিত করি, মার্কিন মুল্লুকেও দেখি
পরশুরামের কুঠারের চলন; কি বিশ্বাস হয় না?


এই এক কুঠার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত শেষের নিশানা পায়নি,
কারণ এখনো ব্রক্ষ্মকুণ্ডের পূণ্য জলে স্নান হয়নি;
হাত হতে খসে পড়েনি সে কুঠার, হয়নি তার লাঙ্গলে রূপান্তর।
এখনো ঝরছে তাই ভাইয়ের হাতে ভাইয়ের রক্ত,
ছেলের হাতে মায়ের রক্ত, রক্তের বন্যা বহমান পৃথিবীর দিকে দিকে;
পুড়ে খাক হচ্ছে ধরিত্রীর ৩৫টি দেশ, বৃক্ষহীন, পানিহীন, মরুময়
এ কালের পরশুরামও কি খুঁজে চলেছে ব্রক্ষ্মকুন্ড, এই বাংলায়?
চৈত্র আসে চৈত্র যায়, আসে বৈশাখ, দিন দিন বেড়ে চলে
পরশুরামের তীর্থ জল অনুসন্ধান; কবে তার শাপমুক্তি হবে?
এই বৈশাখে নাকি আগামী আষাঢ়ে?
কবে পাবে সে পুণ্য বারিধারার দেখা, প্রিয় পরিত্রাণ!


এই বৈশাখ যেন পরশুরামের ভ্রাতৃঘাতি কালের পরিসমাপ্তি টানে,
ধর্মপিতার বা ধর্মঋষির অবিবেচক ধ্যানমগ্নতা সমূলে ধ্বংস করে!
হত্যা নয়-রক্ত নয়, ধরণী যেন প্রকৃতই হয়ে ওঠে শুচি-শুভ্র মনন-চেতন-গানে।


বট ও পাকুড়/ঢাকা।
১৩ এপ্রিল ২০১৬/বুধবার/৩১ চৈত্র ১৪২২