তুমি বই রেখে উঠে দাঁড়ালে, কেন? ঠিক জানো না তার কারণ
তবু কে যেন ডাকে তোমাকে, বইয়ের পৃষ্ঠার চেয়ে সজোর সে আহ্বান
আলগোছে উল্টে যায় পাতা, একেবারে প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা....
ধীর পায়ে বেরিয়ে যাও ঘরের বাইরে..যদিও জানালার পাশে
শ্যাওড়া গাছের অস্বাভাবিক বৃহৎ তরু, বাতাসে নাচায় পাতা।


প্রথমে হঠাৎ আলোর ঝলকানি, ছুটে আসো তুমি
চোখে মুখে খুশির ঝিলিক, আনন্দ, জানি অনুবাদহীন।
তারপর মেঘের জলদ গম্ভীর গুরু গর্জন, বর্ষার আবাহন।
‘‘বৃষ্টি এসেছে বাবা, একটু ঘুরে আসি....’’
অনুমতির জন্য বলা, কিন্তু অনুমতি নেয়ার তর সয় না,
বইয়ের পৃষ্ঠার চেয়ে তরতরিয়ে উড়ে ওল্টে তোমার মনের পৃষ্ঠাগুলো
ছুটে চলে অদেখা মাঠে, অচেনা নদীর পাশে
ভেসে যায় অজানা স্রোতে, হারায় নিজের পরিচিত জগত।


আকাশ ভেঙ্গে নামে বৃষ্টির ধারা, তখন তোমাকে
পাওয়া যায় কাঁঠাল পাতার গায়ে গাল ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকায়
তোমাকে দেখা যায় ভর দুপুরের কালো মেঘের বিগলিত
শুভ্রধারায় সারাটি দেহ ভিজিয়ে আকাশে চোখ খুলে রাখার
কী এক মহানন্দা খেলায় উচ্ছ্বসিত হতে, দেখা যায়
কোমর সমান চারা আম গাছের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁচা আম হাতে
তোমাকে দেখা যায় ভেজা বকুলের ভেজা গন্ধ-শরীর মুঠে ভরে তুলে আনায়।


আজ মধ্য দুপুরের এক পশলা বৃষ্টি বুকে করে তোমার এই অবাক স্নান
আমাকে জানিয়ে যায় ‘‘আজ আষাঢ়ের নীরব আগমন ঘটেছে, সাথে
তোমার পুনরাবির্ভাব ঘটেছে মর্ত্যে আরো কয়েক দশকের জন্য
তোমার অবর্তমানেও, যে অনুভূতি তোমাকে ভাসিয়ে নেবে।’’
যদিও তখন আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ মনের ভিতরে
যদিও তখন তীক্ষ্ণ যন্ত্রণানুভূতি একটানা হেভি মেটাল
বাজিয়ে চলেছে করোটির প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে,
তাকে ছাপিয়ে বর্ষার এই মন্দ্র মধুর আবাহন
পড়ন্ত এই আমাকে জানাতে পারেনা,
যা পেরেছ তুমি, আমার আত্মজ, আরেক সত্ত্বা।


পুত্রের কথায় প্রাণ ফিরে পাই, এসেছে মুখর বর্ষা
সব রূপ সাথে করে আরেক সময়কে জাগাতে।
এমন অবাক আগমন, এমন প্রবাহ আগে কখনো দেখিনি।


বট ও পাকুড় (বর্ষা অথবা অাষাঢ়)/পরিকল্পনা কমিশন, ঢাকা।
০১ আষাঢ় ১৪২৩/বুধবার/১৫ জুন ২০১৬।