বাইরে হঠাৎ গুলির শব্দ। চার রাউন্ড গুলি হলো। আবার কিছু কি হচ্ছে?
এখন নানারকম হেলুসিনেশন হয়। অশ্রুত শব্দ কানে ভাসে।
পাঁচ।
মনে হলো হল্লার শব্দ শুনলাম। হয়তো এটাও হেলুসিনেশন।
ছয়।
কিছু আগে একটি গাড়ী যাবার শব্দ।কিছু কি হচ্ছে? বা হয়েছে।
সাত।
রাত প্রহরীর হুইসেল বাজছে, একটানা, জানালা খোলা।
আট।
সুনসান নীরবতা। কয়েক মুহূর্ত। রিক্সার শব্দ।
নয়। এবার বেশ প্রচন্ড শব্দ। হুইসেল থেমে গেল।
কে বা কারা যেন চীৎকার করছে, কারো নাম ধরে যেন ডাকছে।
আবার কোন মায়ের কোল, পিতার পুত্র, সন্তানের বাবা, প্রিয়তমের প্রিয় কি
পৃথিবী থেকে নেই হয়ে গেল।
রাতে ঘুমাতে যাবার আগে যে ভেবে রেখেছিল কাল কী করবে!
কোন কাজটি এ সপ্তাহেই শেষ করতে হবে!
হয়তো হাসপাতালে কোন প্রিয়জন অসুস্থ্য, তার পথে চেয়ে আছে।
হয়তো সে কোন ..... ভাবতে পারছি না। চারদিক নিঃশব্দ।
অপারেশন কি হয়ে গেল।কাল কি পত্রিকার আবার কোন দুঃসংবাদ!
এখন ঘুম জেগে দেখি অশুভ সংবাদে ভরে আছে পত্রিকার পাতা।
এখন দপ্তরে, কারখানায়, হাসপাতালে সবখানে মৃত্যুর দূতের বিস্তর ছুটাছুটি।
কুকুর ডাকছে, অস্থির। হুইসেল বাজছে মাঝে মাঝে।
জানিয়ে দিচ্ছে কি অস্থির সময়ের শ্বাপদ চলাফেরা।
এখন ভাই ভাইকে, মা ছেলেকে, বাবা সন্তানকে, প্রিয় প্রিয়াকে চিনতে
ভুল করার সময় বুঝি এসে গেছে, সবার চোখে দৃষ্টির বাইরে থাকবে
একটি সন্দেহযুক্ত দৃষ্টিপাত, ক্ষুদে সংশয়, গোপন দ্বিধা ও ভয়।
আমরা অবিশ্বাসের উচ্চমার্গে পৌঁছে গেছি।
বিশ্বাস ও বিশ্বাসীগণ, আমাদের প্রিয়জন, পরিচিত মুখ, হঠাৎ হারানো কেউ
বার বার মনে করিয়ে দেবে, বিশ্বাস করেছ কি ভুল করেছ,
এখন আর মানুষকে বিশ্বাস করা যাবে না, গ্রহণ করতে হবে শর্তসাপেক্ষে।
হুইসেল বাজছে, ঘড়ি টিক টিক করে ঠিক এগিয়ে যাচ্ছে মধ্যরাতের দিকে।
জানালার পাশে ঋজু আমগাছের পাতারা নিশ্চল, হাওয়া নেই,
পাশে ভেজা উন্মুক্ত মাঠ, মাঠের পাশে মসজিদ,
মসজিদে রাতভরা জ্বলে থাকা সরকারী বিনামূল্যের বিদ্যুতের আলো
অন্ধকারকে সরানোর সুন্দর ব্যবস্থা, তবু অন্ধকার ভর করে থাকে।
প্রিয় রাত এখন ঘুমাচ্ছে, শুধু রাত প্রহরী, পথের কুকুর, জেগে আছে
জেগে আছে গুলি ও গুলির সামনের মানুষটি, আর জেগে আছে ......
চলমান ভয়, অবিশ্বাস ও সংশয়, বাংলাদেশ ২০১৬ এর রক্ত টীকা।


বট ও পাকুড় (অভয়)/ঢাকা।
৩১ আষাঢ় ১৪২৩/শুক্রবার/১৫ জুলাই ২০১৬।