গল্পটি শেখ সাদীর, তবে পাঠটি নতুন করে।
একটি ছাগ শিশু একদা পথের কোন একখানে
এক বাঘের মুখে পড়েছিল-ভীষণ হত বিহ্বল
এক পুরোহিত তাকে উদ্ধার করে নিজের জিম্মায় নেয়;
সে কী যত্ন-আত্তি, ছাগশিশু আহ্বলাদে আটখানা
পুরোহিতের উপর যারপরনাই খুশি ও বিগলিত প্রায়।
এক সন্ধ্যায় দেতার আরাধনার পূণ্য আয়োজন চলছে,
পুরোহিত দেবেতার উদ্দেশ্যে বলি চড়াতে গেলেন
বাঘের মুখ থেকে উদ্ধার করে আনা ছাগ শিশুকে......


ছেলেটি পার্বতীপুর রেলকলোনী স্কুল থেকে পাশ করে
রাজশাহীতে এসেছে, কলেজে ভর্তি হবে,
থাকার জায়গা খুঁজছে, শিক্ষা নগরী রাজশাহী।
শত শত স্কুল কলেজ, মেডিকেল কলেজ, মাদ্রাসা
কারিগরী ও বিষয়ভিত্তিক পাঠের কলেজ, প্রযুক্তি ও
সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়....শত শত হোস্টেল-ছাত্রাবাস,
শত শত মেস ও বেসরকারী আবাসিক ব্যবস্থা।
ছেলেটির কোন স্থান নেই, কোথায় থাকবে!
তখন তার জন্য এগিয়ে এল দেবদূত..মেসে থাকবে?
...থাকব, মেসই ত খুঁজছি
..একটা সিট আছে, তুমি থাকবে?
...কোথায়? ভাড়া কত
...হেতেম খাঁ, আমার রূমে, বড় মসজিদের কাছে, থাকবে?
...ভাড়া?
...সেটা সমস্যা নয়, তোমার যা সামর্থ্য এখন তাই দেবে
...তাহলে তো ভালই হয়
...কিন্তু একটা শর্ত আছে, তোমাকে নামাজ পড়তে হবে
...কেন?
...তুমি কি মুসলমান?
...তাহলে নামাজ পড়ার বিষয়ে কেন বলছ কেন?
...কিন্তু মেসে থাকার শর্ত নামাজ কেন? সেটা ত কেউ
এমনিতেই পড়বে
...যেভাবেই পড়ো পড়লেই হলো!


ছেলেটির মাথা গোঁজার স্থান হলো, চলল হবু রূমমেটের সাথে
তারপর অনেকগুলো দিন খুব সুন্দরভাবে অতিবাহিত হলো!


পাশাপাশি চিত্র--
নিয়মিত নামাজ, পাঁচ ওয়াক্ত, পড়াশোনার তদারকি
মেসের নিয়ম কানুন জানা, মসজিদের লাইব্রেরী থেকে
নিয়মিত বই সংগ্রহ ও পাঠ, মওদুদী, হাসানুল বান্না অনুবাদ
কলেজের পাঠেও রুটিন মাফিক যোগদান, পড়ালেখা
বেশ ধার্মিক ও মুখে হালকা দাড়ি গোঁফের কালো রেখা
কলেজের ফলাফলে ভালোর দিকে ঝোঁক, অভিভাবক খুশি
তারপর দু’চারটে মিছিল-মিটিং পড়াশোনার ফাঁঁকে রিক্রিয়েশন
রাজশাহীর কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন
সাধারণ রূমমেট থেকে অসাধারণ পথ অনুসারীতে রূপান্তর!
সাধারণ সমর্থক থেকে অন্ধ সমর্থক, তারপর কর্মী, জঙ্গী,
সাথী, সদস্য সবার ভাগ্যে জুটবে না, কারণ-
তারা মেন্টর হবে, অন্ধ কর্মী হবে জঙ্গী লেঠেল ও স্কেপ গোট।


Islam is the only solution of humanity
No east no west Islam is the best.......
আমরা সবাই.............ভয় করি না বুলেট-বোমা
মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী আমরা সবাই মরতে রাজী।


ছেলেটির হৃদয় অাল্লাহ্‌র প্রেমে মশগুল,
খোদার প্রেমের শারাব পিয়ে...বেহুঁশ হো কর গির পর
ছেলেটি বিষয়ভিত্তিক ফলাফলে শ্রেষ্ঠত্বের স্বাক্ষর রাখে।


তারপর সামনে এলো তার পরীক্ষার কাল
প্রথমে গান পাউডার দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের
ছাত্র হল পোড়ানো, একজন শিক্ষক নিধনে সহযোগী;
এবার হাত পেকেছে তার, বেড়েছে দক্ষতার ব্যাজের বাহার
পিতামাতার চেয়ে আল্লাহ বড়, বেরিয়ে এল ঘর থেকে
তারপর নাস্তিক মুরতাদ নিধন, হিন্দু-ক্রীষ্টান নিধন,
এলজিবিটি নিধন, বৌদ্ধ নিধন, অমুসলিম বিদেশী নিধন...চলছে
এসব হলো গুপ্ত হত্যা। এরপর সামনে ....পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ....
পুলিশ হত্যা..গ্রুপ কিলিং-গণহত্যা, হত্যায় সে এখন জগৎ চেনা
ভালো ছেলেটি আর স্বস্থিতে থাকলো না, এভাবেই একসময় ‘‘নেই’’।


যখন পুরোহিতের ছোরা চলছিল ছাগশিশুর গলায় অথবা
যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে পড়ে
একটি নির্বান্ধব বুলেট প্রবেশ করছিল তার বুকে,
তখন কি ছাগশিশুর পুরোহিতের সেই প্রথম দিনের কথা বা
ছেলেটির কি তখন হেতেম খাঁ মেসের সেই বড় ভায়ের কথা
তার শশ্রুমন্ডিত সৌম্যদর্শন মুখ মনে পড়ছিল!
নাকি মনে পড়ছিল ঘরে রেখে আসা বাবা মায়ের কথা,
নাকি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই নিরীহ ছাত্র-প্রেমি শিক্ষক?
নাকি সেইসব বিধর্মী পুরোহিত, যাজক, সেবক, সমাজকর্মী,
দর্জি, বিদেশী অতিথি উন্নয়ন কর্মীর মুখ ভাসছিল--
যাদেরকে সে আল্লাহ্-ঈশ্বর-ভগবান বা প্রকৃতির কাছে
ফেরত পাঠিয়েছে অকালে, তাদের কথা কি মনে পড়ছিল?


আমাদের দুঃখ, আমরা সেটা কখনোই জানতে পারবো না। কেননা,
ইতিহাসের অপ্রকাশিত সত্যগুলো মানুষ জানে না,
জানে কেবল অমানুষ ও অতিমানুষেরা; আমরা প্রথম দল ভুক্ত।


অভিজ্ঞান-৭
০৫ আগস্ট ২০১৬/শুক্রবার/২১ শ্রাবণ ১৪২৩,ঢাকা।