বঙ্গবন্ধু যেদিন পাকিস্তানের কারাগার থেকে বেরোলেন
তিনি জানতেন না কী হতে যাচ্ছে, ফাঁসী না জেল?
কবর তো তৈরিই তাঁর সেলের পাশে, সেটা জানতেন;
কিন্তু জানতেন না তাঁর স্বপ্নের স্বদেশ এখন স্বাধীন!


আর পরাজিতরা মাথা হেঁট করে শেষ ট্রেনে ছাড়ছে কমলাপুর
শেষ স্টীমারে যাচ্ছে চালনা, পাকি মুল্লুকে প্রত্যাবর্তন।
তারা জানত না কী হতে যাচ্ছে তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন!
তবে ১৯৫ জনের জন্য প্রস্তুত ছিল আগ্রা ফোর্ট।


সেই ভোরটি ছিল আশ্চর্য্য আলোয় গৌরবোজ্জ্বল, মহিমাময়
সেই সকালটি ছিল আশ্চর্য্য সৌন্দর্য্য উদ্ভাসিত।
কিন্তু সব অনুভূতি ম্লান হয়ে যায়, যখন শুনি, প্রথমে
রায়েরবাজার, তারপর কালাপানি, এরপর জল্লাদখানা-পাহাড়তলী।


ক্রমশঃ উদঘাটিত সারাদেশব্যাপী শত সহস্র বধ্যভূমি
সেগুলো ছিল রণক্ষেত্রের বাইরে, নিরীহ জনগোষ্ঠীর হত্যা ক্ষেত্র।
সেগুলো ছিল নির্বিরোধী সৃজনশীল ও বুদ্ধিজীবি-সংস্কৃতিকামীদের
প্রাণ সংহারে পাকিস্তানী সরকার গঠিত সেকেন্ড লাইন যোদ্ধা দলের কুকর্ম।


ময়দান দখল করে একেক স্থানে একেক যুদ্ধাপরাধী ও
মানবতাবিরোধী জন্তুরা জল্লাদ, কসাই, বাংলা খান নামে
সবার অলক্ষ্যে চালিয়েছে হত্যার ক্লেদাক্ত কর্মযজ্ঞ;
রাজাকার, আলবদর, আল শামস্‌ বা শান্তি কমিটির ব্যানারে।


একটি আলোকোজ্জ্বল প্রত্যুষ নিমেষেই মেঘাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে
ভারী হয়ে ওঠে বধ্যভূমি সজনের গোপন-প্রকাশ্য কান্নায়, সর্বত্র
নৃশংসতার খবর ছড়াতে থাকে, মানুষ শিহরিত হয়।
ভীড় বাড়ে বধ্যভূমিতে, হারানো প্রিয়জনের খোঁজে।


চোখ উপড়ানো, অাঙুল কেটে ফেলা, হৃদয় খুবলে নেয়া বা
করোটি গুঁড়িয়ে বিচূর্ণ করা মস্তিস্ক বলে দেয় তারা ছিল কারা
কী ছিল তাদের অপরাধ, কেনই বা তাদের নিজস্ব অঙ্গন থেকে
ছলে-বলে-কৌশলে তুলে নিয়ে ছিল কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে।


বঙ্গবন্ধু এসবও জানতেন না, তাঁর সামনে ছিল স্বাধীনতার সংবাদ
ছিল স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি, সহযোগী দেশের সৈন্য প্রত্যাহার
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও নারীযোদ্ধা ও বিপন্ন নারীদের পুনর্বাসন
প্রতিরক্ষা ও মুদ্রা ব্যবস্থা সচল করা, যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন।


তিনি দেশে ফিরেছেন, কিন্তু ঘটে যাওয়া এই কালো অধ্যায়টি
একটু একটু করে পুড়েছে তাঁর হৃদয়, তিনি উক্তিহীন
সরকার ও দেশ গঠন করেছেন, সংবিধান প্রণয়ন করেছেন
তার মাঝে বসিয়ে দিয়েছেন ক্ষরণরোধী বিধান।


রেখেছেন যুদ্ধাপরাধী বিচারের ব্যবস্থা, আর জেলে পুরেছেন
সাঁইত্রিশ হাজার অপরাধীকে, ছাড়া পায় নি চিকন আলীও।
বঙ্গবন্ধু শুরু করলেও মাঝে থমকে ছিল ক্ষতপূরণ আখ্যান
সেদিন শুরু হলেও ক্ষরণ আজো থামেনি।


আর একটি দিন অপেক্ষা...ক্ষরণ যেন শুকাতে শুরু করে!
অনেক প্রত্যাশায় বেঁধে আছি বুক.....প্রাণভরা নিঃশ্বাস চাই।।