১.


আমি নিশ্চিত, তোমার সাথে আর কোন সংঘাত হবে না
তোমার সাথে আর কোন মনোমালিন্যও হবে ইতিহাস
এ দু’টো ক্রিয়ার জন্য যে ঘাত প্রয়োজন, তা এখন
সম্পর্কসূত্রহীন শব্দমাত্রায় আবদ্ধ, কাতরমান।
সংঘাত-টানাপোড়েন আর মতদ্বৈততা হতেও কিছুটা
সম্পর্ক প্রয়োজন হয়, শত্রুর সম্পর্ক বা মিত্রতার সম্পর্ক;
যদি এ দু’য়ের কোনটিই বর্তমান না থাকে, তাহলে
ওসব আসবে কি করে? না আসবে না, হবে না।


সুতরাং তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো, আমাদের মধ্যে আর
কোন শুষ্কতরুর দেখাও মিলবে না। আমরা বেঁচে থাকবো
ঘোর সবুজের অরণ্যঘেরা নিবিড় নির্জনতায় অনন্তকাল।


তবে একদিন হয়তো দেখা হবে আবার, যখন আবার
পৃথিবীতে গ্লেসিয়ার নতুন করে জমবে, আফ্রিকাতে
আরব মরুখন্ডে বা নিরক্ষীয় বনাঞ্চলশোভিত এলাকায়;
তুমি তোমার গৃহকোণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে বন পুড়িয়ে
সরু পথ সৃষ্টি করছ, আমি খুঁজছি হারানো দেশলাই,
দাবানল লাগাবো বলে। সেদিনও কোনো সংঘাত হবে না,
কারণ, আমরা আমাদের কাঙ্খিত সরণী রচনা করতে
সফলভাবে ব্যর্থ হবো, বিচ্ছিন্নতা আমাদেরকে সম্পূর্ণ
জমাটবদ্ধ শীতলতায় আটকে রেখে আরো কয়েক সহস্র
কাল পেরিয়ে যাবে, নতুন মুদ্রার দিকে।


২.


লীলাবতীর অপার্থিব গন্ধমাখা কক্ষ অথবা করিডোর দিয়ে
তুমি বেরিয়ে চলে গেলে চিরস্থায়ী ঠিকানায়, ভেসে;
আর আমি ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কী এক ঘোরের ভেতরে
রচনা করে চলেছি শব্দমালা-কথকতা-অবিশিষ্ট দিনের
রোজনামচা, বড় একা একা লাগার অনুভূতি সিঞ্চিত।


আমি জানি এভাবেই আমার যুবা কাল দপ করে নিভে যাবে
নিবিড় মাদকতায় ঠুস করে হাত থেকে খসে পড়বে
পানের গেলাশ, হঠাৎ ঝনঝন শব্দ খানখান করবে যাবতীয়
নৈঃশব্দ, মনোনিবেশ ও কালাতিক্রমিক ধ্যানমগ্নতা।
গুরু, ‍তুমি কেবল চলেই গেলে না, আমার কৈশোর
পেরনো তারুণ্য, প্রাণ ফিরে পাওয়া যুবাকেও সাথে করে
নিয়ে গেলে হিমযুগের কাছে, পৃথিবীর কাছে এখন আমার
আর কী-ই বা পাবার আছে--মনে করিয়ে দিচ্ছে গুটাবার বেলা।


লীলাবতীর সফেদ অন্ধকার তোমাকে আলোছায়া,
সুর ও সুরাবিহীন এক অপরিবর্তনীয় জগতে টেনে নিলেও
আমাকে করে গেছে নিঃসঙ্গ নিষ্প্রাণ সাঙ্গ খেলা।


বিঃ দ্রঃ সুরস্রষ্টা গরু জগজিত সিং শ্রদ্ধাষ্পদেষু।


আরশাদ ইমাম//বিচ্ছিন্নতার কাল
১০ অক্টোবর ২০১৬//২৫ আশ্বিন ১৪২৩//ঢাকা