ভূমিকা


বোবা হয়ে থাকার মাঝে শান্তি আছে, কানে তুলো দিয়ে থাকার মতো
প্রতিবাদহীন থাকার ভিতরে স্বার্থপরতা আছে, যেমন
অধিকার চাওয়ার মধ্যে ডুবে থাকে স্বার্থের পরিপূর্ণ স্বাদ
উদাসীন হয়ে থাকার ভিতরে সুবিধাবাদিতা আছে, আছে
উঠ পাখির বালির মধ্যে মুখ গুঁজে থাকার মতো নিরাপত্তা বোধ;
আমি এসবে কোন দোষ দেখিনা, সহজাত সব। কিন্তু
আমার প্রতিবাদ দেখে আপনি শঙ্কিত হবেন, মুখ বন্ধ করবার জন্য
লোক পাঠিয়ে শাসাবেন, দরজায় ঝুলিয়ে দেবেন লাল নোটিশ
না হয় পোস্ট বক্সে ঠেসে দেবেন মৃত্যুর পয়গাম, মেনে নিতে পারি না।


লক্ষ্য


আমি নির্বিরোধী সারাক্ষণ, কিন্তু কোন কোন দান্দ্বিক বিরোধে আমি
সমর্থন জুগিয়ে যাবো আদ্যোপান্ত, দ্বিধাহীন, নিঃশঙ্ক চিত্তে, বিরোধ
আমাকে বিচলিত করবে না মোটেও, বরং বিরোধের টানে
পথে নামতেও দু’পায়ে খাড়া, শ্লোগানে, শ্লোগানে, ব্যানারে, ফেস্টুনে
মানব বন্ধনে, প্ল্যাকার্ড বহনে, দেয়াল লিখন বা সামাজিক মাধ্যমে
এমনকি পুলিশের লাঠির বাড়ি খেতেও প্রস্তুত, যদি বিরোধটি
সভ্যতার জন্য, সংস্কৃতির জন্য, জীবনাচারের জন্য এমনকি
মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় হয়। তেমন বিরোধ কি কোথাও দেখছেন?


বাস্তবতা


এই যে মেয়েগুলো মারা যায় বা যাচ্ছে, কী যেন নাম, তনু, খাদিজা,
পূষ্প বা পূর্ণিমা, মহিমা বা ইয়াসমিন, পূজা-আরো কত কত নাম!
এদের বেঁচে থাকাটা কি স্বভাবিক ছিল না? নাকি মরে যাওয়াটা?
তাদের বিচার চাওয়াটা কি স্বাভাবিক নাকি গর্হিত?
যদি স্বাভাবিক বা ন্যায্য হয়, নিশ্চয়ই আপনাতেই খুলে যাবে আমার
কন্ঠের আগল, উঠে যাবে আমার মুষ্ঠি, না-ই হোক তা বজ্র কঠিন
থেমে থাকবেনা সময়ের ডাকে।


অবস্থান


কিন্তু সত্যের আহ্বান জানিয়ে যদি দেখি
আপনি স্যুপ খাচ্ছেন টারকি-পাকি বাটিতে, যদি দেখি
রামপাল-কয়লা-পরিবেশ পরিবেশ বলে ন্যায্যতার আড়ালে
অজ্ঞাত উৎসের অগণন অর্থে প্রচার চালাচ্ছেন ব্লক বাস্টার মুভির মতো
কয়লা বিদ্যুত উৎপাদনের আগেই অচেনা কালিতে ঢাকছেন মুখশ্রী,
আমি ঠিক চিনে নেব, এমনকি প্রতিবাদের ভাষাও বদলে যাবে
প্রবল ডিগবাজী বিশারদের মতো, দ্বিধান্বিত হবো না মোটেও।


দিকে দিকে নানা অপমৃত্যু হত্যা গণহত্যা দেখেও
আমি নিশ্চুপ বসে থাকি প্যাঁচার মতো
মুখ গুঁজে থাকি স্ক্রীনে, কানেও শুনি না হট্টগোলের জোস;
এর মানে এই নয় যে আমি দেখছি না কিছুই; বরং
অনেকের চেয়ে বেশি দেখছি, দেখছিও খুব স্পষ্ট পেনিট্রেট করে;
কোন তকমার ভিতরে কোন বুলি বাসা বেঁধে আছে,
কোন মৃত্যুকে আপনি যায়েজ বলছেন।


পর্যবেক্ষণ


আমি প্রতিনিয়ত দেখছি কোন গণত্যাকে স্বীকৃতি দিতে
পঁয়তাল্লিশ বছর লাগে, কোন গণহত্যা নিয়ে শতবছরেরও কেন
কোন শিল্ডার্স লিস্ট তৈরি হয় না, হয় না ব্লাড ডায়মন্ড।
বরং কোন গণত্যার পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়, বলতে চেষ্টা করা হয়
গৃহযুদ্ধ, কোন গণহত্যাকারীদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য।
রাষ্ট্র সংঘ থেকে শুরু করে মার্কিনী প্রভূদের লবিস্টদের কাছে
নাকাড়া বাজানো হয়, কেন ট্যুরিস্ট ভিসা হাতে নিয়ে ভিনদেশি
নাগরিক দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বারান্দায় গিয়ে হাজির হয়।
আমি খুব উপলব্ধি করতে পারি তাদের অবস্থান
সেই মৃত্যু আপনার স্বার্থের পক্ষে ছিল, মৃত্যুদাতারা ছিল
আপনার পদলেহী! লেহন এখনো অব্যাহত আছে।


কেন?
কেন আমার মাটির ঘরে কোন পাকি ঝি আশ্রয় দিয়ে, খাদ্য দিয়ে
অঙ্ক ভরে আসন দিয়ে, ওড়না-চুল-স্তন সম্ভার, চাই কি
সারাটি দেহের ঘণ পর্দা দিয়ে আকাশ ভরা জোছনা-তারা,
ছায়াপথ থেকে চোখ আড়াল করিয়ে পয়দা করে বিজাতীয় হাইব্রীড ।
আমি বুঝি সে সব, কারণ তার বীজের ভিতরে লুকানো পাকি রসদ,
রক্তের ভেতর দূষিত লালের প্রবহমানতা।


তাই দেখি কোন কোন অপমৃত্যু অথবা হত্যাকে তুমি
পোশাকী নামে, ধরো জিহাদ, ধরো ক্রুসেড-এসব নামে
তুমি আহ্বান জানাও আর, বুঝি, কোন উজবুক পতঙ্গদল
পুড়ে মরার জন্য ঝাঁপ দেয় আগুনে একা বা সদলবলে;
আমি সব দেখি, সব বুঝতে পারি সম্ভবতঃ। কেননা,
সাহসী বীরপুরুষ যোদ্ধার চোখেও দেখি ভয় ও বিরহের কান্না,
সাহসী অকুতোভয় নারী যোদ্ধার বুকেও দেখি নখরের আঁচড়,
চোখের নিচে জমে ওঠা অসহ্য কালিমা; আমি বুঝি।


সিদ্ধান্ত


আমি তোমার পক্ষে গড়া যুদ্ধে সৈন্য হবো না, বরং শত্রু হবো
তোমার সাজানো নাটকে অভিনয় না করে উল্টিয়ে দেব ঘট,
তোমার রাঙানো ক্যানভাসে-পটে ছবি না হয়ে
প্রকৃতির কাছেই ফিরে যাবো, খুঁজে নেব জীবনের রং;
আমি মারা যাবো আমার এই পরার্থপর স্বার্থপরতা নিয়ে, তবু
তোমার মতো লুকানো স্বার্থের পরার্থপরতায় ক্রীড়নক হবো না।
আমি ঠিক খুঁজে নেব সাদা-কালো পতাকার পিছনে কী আছে
কমিউনিস্ট লাল পতাকার পতনের এতবছর পর ঢাকা ও টার্কির
লাল পতাকার লালের অর্থ কি? কেবলই রং না রক্তের নিশানা।
আমি সারাজীবনে একটি বারও গ্রগতির পক্ষে শব্দ ছুঁড়ব না
কিন্তু আমার ঘরের একটি ইটের গায়ে তুমি হাত ছোঁয়ালে
প্রতিটি আঙুল থেকে নখ, প্রতিটি হাত থেকে আঙুল খুলে নিয়ে
এক একটি মানবতার কবিতা লিখব, যাতে থাকবে
গণহত্যাকারীদের দূষিত রক্তের ইতিহাস, নব্য লাল রঙ।


উপসংহার


আমাকে নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে। নিজেকে নিয়ে ভাবো।
কেননা, কদিন পর কী হবে, কেউ তা আগাম বলতে পারে না।
সময় অব্যর্থ বিচারক, সেখানে কোন উকিল-মোক্তার লাগেনা,
চলেনা কোন আপীল বা রিভিউ বা রক্ত চোখের নির্দেশনা।।


আরশাদ ইমাম//২৯ অক্টোবর ২০১৬//শনিবার//১৪ কার্তিক ১৪২৩//প্রিয় শয্যা//ঢাকা।