মাথাটা ঝিম ঝিম করছিল দু’দিন থেকে
কোথাও বেরোইনি আজ সারাদিন
গৃহবন্দী ও গর্তমূখী সময়ের কাছে সমর্পণ;
যদিও বাইরে ফাইটার বিমানের শব্দ, আকাশে চক্কর মারছে
বর্ণিল আলোর ধোঁয়া, বাচ্চারা হল্লা করছে, মানুষের মিছিল
কেউ ছুটছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে,
কেউ শিল্পকলা একাডেমিতে, কেউ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে
সংসদ ভবনের দখিন উঠোনে লেজার শো
টান টান আনুষ্ঠানিকতার আমেজ, রাজধানী জুড়ে
আমাকে সব কেমন যেন মিইয়ে রেখেছে।


ভাবছি : কেন?
উত্তরটা পাচ্ছি না।


এই দেশে একসময় একটি নাম ও একটি শ্লোগান
একটি সংগঠন অথবা প্রতিষ্ঠান ও একটি দেশের নাম
উচ্চারণ নিষিদ্ধ ছিল। নিষিদ্ধ ছিল মুক্তিযুদ্ধ।
আজ পথে পথে মুক্তির শ্লোগান শুনে, বিজয়ের আয়োজন দেখে
উল্লসিত হবার কথা, কিন্তু মন বিমর্ষ কেন?


জবাবটা খুঁজছি,
কিন্তু পাচ্ছি না।


একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে একটি মুখচ্ছবি আঁকা কোট পিন
আমাকে বিব্রত করেছিল, এক সুহৃদ সাবধান করেছিল
ডেকে বলেছিল: ভালাবাসাটাকে বুকের ভিতরে রাখো
বাইরে নয়, সময় এলে বের কোরো, এখনও সময় আসেনি।
তার ক’দিন পর ক্যাম্পাসে এক যুদ্ধাপরাধী নিগৃহীত হলো
সুহৃদ ডেকে বললো, আওয়াজ শোনা যায়? তারপর মুচকি হেসেছিল।
এখন কোট পিন বুকে ধারণ করতে পারি, কিন্তু ঘরে থেকে বেরোতে
মন সায় দেয় না, বাতাসে কোন সৌরভ টের পাই না,
মনে হয় কানের কাছে কেউ ফিসফিসিয়ে কিছু বলছে।


কিছু কি বলছে?
অনুবাদহীন অনুভূতি।


এখন একদিকে অপরাধী দন্ডিত হচ্ছে, দন্ড কার্যকর হচ্ছে
অন্যদিকে, কাঁধের উপরে কার যেন নিঃশ্বাস, অপরিচিত।
নিজেকে হারিয়ে কি বিজয়ের শেষ ফানুসটি উড়াচ্ছি?
আমার মৃত্যুর পর কি শুধুই বিজয় শব্দটি থাকবে, থাকবে স্বাধীনতা প্রত্যয়টি
আর সব হারাবে নিকষ অন্ধকারে? ডুবে যাবো অচেনা কোন আমুদরিয়ায়!

সবই কি ক্যামোফ্লেজ
নাকি কেবলই ভ্রম! অথবা করুণ বাস্তবতা!


আরশাদ ইমাম/বিজয় দিবস/শুক্রবার/০২ পৌষ ১৪২৩/ঢাকা।