নৈঃশব্দের অতলে ডুবন্ত এক শহরে
এসেছে নিশুতি রাত, সাড়া শব্দহীন;
অথচ একদিন বা এককালে এমন ছিল না।


একদিন ছিল শ্লোগান মুখর রাত, পাড়ায়-মহল্লায়
অলিতে গলিতে রাতভর বাজত ভাষণ, বজ্র নিনাদ
সকাল থেকে এভিনিউগুলো ভরে উঠতো পদচারণায়
শ্লোগান, মিছিল, পতাকা, সব গন্তব্য একটি সড়কে
একটি হ্রদের পাশের দোতলা বাড়ীতে। একদিন
ছিল চেতনা নামের এক আশ্চর্য্য প্রপঞ্চ মানুষের
হৃদয়ে, মগজে এবং তার প্রকাশ ছিল ভালোবাসায়
প্রকাশ ছিল শ্রদ্ধায় শাণিত; ছিল স্বপ্নময়তা চোখ ভ’রে।


আজ নিবিড় শূন্যতা ছড়িয়ে আছে ঘরময়
নগরের অলি-গলি-রাজপথ ও পাড়া-মহল্লায়
আছে রাস্তার পাশে কুঁড়েঘরের মতো গজিয়ে ওঠা
আধুনিক ভিক্ষাকেন্দ্র, যেখান থেকে চাঁদাভিক্ষা কার্যক্রম
নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যেখানে দু’টি বিশেষ ফটো ফ্রেম
সারাক্ষণ শোভা পায়, ফটোগুলো তাদের রক্ষাকবচ
তাদের বিপদাপন্নতা থেকে রক্ষা করে- যেভাবে
এককালে রক্ষা করেছিল এই অকৃতজ্ঞ গোটা জাতিকে-
বাঙ্গালী বা বাংলাদেশীকে; সেখানে নিবিড় নীরবতা।


উত্তাল মার্চ এসে নীরবেই চলে যাচ্ছে
ছবিবাজদের কোন নড়াচড়া টের পাই না
বড় দুর্দিন আজ বাংলাদেশে, হতস্বঃ হয়ে পড়েছি।


একদিন মার্চ মানে ছিল মুক্তির চেতনা, মার্চ মানে ছিল
সংগ্রাম, ছিল মানুষের মুখ, ছিল প্রেরণার অগ্নিশিখা;
আজ দেখি নদী শুকিয়ে ক্ষীণধারা খাল, দূষিত ভীষণ
দখলে দূষণে মৃতপ্রায়। দেখি মরা ও দখলীকৃত খাল-পরে
চকচকে জৌলুসময় অট্টালিকা, প্রাসাদোপম গৃহসাজ
দেখি ক্ষুধিত ভিক্ষুকের হাতে স্মার্টফোন, মিনারেল পানি
আর চিপসের প্যাকেট, থলে কুঁজলে হয়তো হাতে
ঠেকতে পারে গোল্ড লীফ বা বেনসন হেজেজ বা ইয়াবা
আজ দিগন্ত বিস্তৃত গোরস্তানের ভিতরেও রাজনীতির বাতাস।


এমন করুণ ও হৃতগৌরব মার্চ আর দেখিনি, কোনদিন
যদিও পদ্মায় হ্যামার নামছে হ্যাম উঠছে, রাতদিন
যদিও সারাদেশ নতুন কর্মযজ্ঞে ঘেমে উঠছে, দেখছি।


এখন দেখি প্রতিটি সরকারী স্থাপনা, বাজার পথ, ক্লাব
মাঠ-ঘাট, বিচারালয় ও থানায় থানায় দেখি মসজিদ
শুনি দেশের প্রতিটি মসজিদে নিয়ম করে বছরে
দুই থেকে তিনবার ওয়াজ নসিহত; মুসলিম উম্মাহাত।
প্রতিটি ওয়াক্তে ও জুম্মাবারে খুতবায় খুতবায় শুনি
বৈশাখ, একুশে ও বাঙালীর বিরুদ্ধে প্রতিটি ইমামের
তীব্র ঘৃণা, হিংসা ও লাগামহীন ফেনায়িত বিষোদগার
অনৈসলামিক তকমার ফতওয়া ছড়িয়ে যায় মানস মগজে
হোক না তা ডিসেম্বর, ফেব্রুয়ারি, মার্চ অথবা বৈশাখ।


এখন শুনছি বাংলা ছাড়াও সরকারী চাকুরী পরীক্ষা হবে।
সাতই মার্চের প্রথম প্রহরে আমি দেখছি বাংলার সন্তাপ
মুমূর্ষূ এ বাংলাই কি চেয়েছিল ভাষা সৈনিক ও মুক্তি সংগ্রামীরা!


০৬ মার্চ ২০১৭; সোমবার; ২২ ফাল্গুন ১৪২৩; ঢাকা।