তুমি প্রশ্রয় দিলে    আমি
নতজানু হওয়া ছেড়ে দেব অলৌকিকের কাছে
সব দীনতা ক্ষুদ্রতা উড়িয়ে দেব ফুৎকারে
জীবনের কলসটাকে উল্টিয়ে ডিঙ্গি বানাবো
ভাসান দেবো ঘোর বন্যাকালে।


তুমি প্রশ্রয় দিলে    আমি
আঙুল তুলে বাতিল করে দেব কালের স্বাক্ষী
দাঁড়িয়ে থাকা প্রাগৈতিহাসিক ধ্বংসস্তুপকে
বাতিল করে দেব মানুষের নির্মিত সব
ইতিহাসের বস্তাপচা প্যাচালকে।


তুমি প্রশ্রয় দিলে    আমি
নিয়ম করে বই কাঁধে চাপিয়ে স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দেব, একদম,
ডাংগুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়ব উড়নচন্ডী বাহিনীর সাথে
প্রতিদিন গিলে খাওয়া মাঠময় কংক্রীটের জঙ্গলকে ছাপিয়ে
উন্মুক্ত উদ্যানে; আমি উড়ে যাব এক মহাদেশ থেকে
আরেক মহাদেশে, স্থলে, পর্বতমালা হতে পর্বতমালায়
এক হ্রদ হতে আরেক হতে হ্রদে অথবা
এক সমুদ্র ছেড়ে আরেক সমুদ্রের গভীরে;
অথবা গ্রন্থিহীন সীমাহীন আকাশের পাঁজরে
বুনে দেব এক নতুন গন্ধমের চারা।


তুমি প্রশ্রয় দিলে    আমি
এক চুুমুকে সাবাড় করে দেব
মানস সরোবর, লেক ফুশিয়ান বা লেক টিটিকাকা,
শুষে নেব সব কালো-নীল জল বৈকাল হ্রদ,
কাস্পিয়ান-কৃষ্ণ-মৃত সাগর থেকে
সমুদ্র মন্থন করে তুলে আনব সর্বপ্রাচীন নুড়ি,
অতল জলে সমাহিত কালান্তরের নাম-নিশানা।


তুমি প্রশ্রয় দিলে    আমি
হতে পারি বাঁধভাঙ্গা বান, চৌচির ভূমিতল,
হতে পারি বিরাণ প্রান্তরে নির্বাক দাঁড়িয়ে থাকা
প্রাগৈতিহাসিক বৃক্ষের প্রস্তরীভূত কান্ড-গুড়ি;
খেয়ে ফেলতে পারি সবুজ মৃত্তিকাসহ যা কিছু মহামূল্যবান
পৃথিবীর ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, কলিজা-যকৃত,
এমন কি হৃদপিন্ডকে বা অলিন্দ নিলয়, যেমন খেয়েছি চাঁদ।


আমি সব পারি, পেরেছি আগেও কত!
শুধু পারি না এখন হাত পা ছড়িয়ে বসতে
পারি না একটুকু ছায়া শুষে নিতে বাওবাব থেকে
কতকাল!,আমি বন্দী, আমি বান্দা বা বান্দী,
দাস বা দাসানুদাস, সেও কতকাল!
হাত-পা বাঁধা, মস্তিস্কেও সহস্রাব্দের ধুলির আস্তর,
অথবা প্লাবনে-পলিতে, খননে-কর্ষণে, ধাবমান ধুলি-বালি ঝড়ে
চাপা পড়ে গেছে মগজ, উপরে লক্ষ বছরের জগজ্জঞ্জাল;
উঠে দাঁড়াতে পারি না সব সরিয়ে,
আহ্বান জানাতে পারি না নতুন সকাল।


তুমি প্রশ্রয় দিলে    আমি
সব পারি, শুধু পাইনা তোমার প্রশ্রয়টুকু, এমন আকাল।


আরশাদ ইমাম//১৮.০৭.২০১৯. বৃহস্পতিবার