তখন ছিলো সন্ধ্যে রঙের পথ। ধূপমিশালি ঘাটে দাড়িয়ে তুমি বলেছিলে, তোমার একটা প্রতিচ্ছবি দেবে আমায়!
সে কথা কচি পাতা হয়ে ঝুলে রইলো টবের গায়, ধূপমিশালি ঘাঠ হলো নীল;
আমি চোখপাতায় হাত ছোঁয়াই -বলি কেন রে এত তেষ্টা?
চোখ শুধু বোবা হয়ে যায়!
সামনে দাঁড়ালে আমি জমে যাই মোমের ফোটার মতো, জমে যাই বটের আঠার মতো! তুমি তাই বোধহয় সামনেই আসো না?


ভরদুপুরে তোমার অবয়ব গায়ে মেখে সুখদাসী বললো এসো,
একঘরা জল দেবে ভাই , আজি তেষ্টা মেটাই
জল দেব কি! নদী যে চোখে; মহাসাগর রেখেছি মনঘড়ির পিঠে!
ছবি হয়ে আছে, কত নেবে নাও!
-নাহ্ শুধু একঘরা দাও?
কলসি উপুর করে দিলাম সব পানিটুকু, তাতে তেষ্টা মিটুক


সুখদাসি সুখ বিছায়ে পাল্টে দিলো আমার দুখু ঘর খানা। দু'দণ্ড সে রইলো তারপর পায়ের ছাপ ফেলে, দিলো ঢ্যাঙা সাঁকো পাড়ি


বিকেলে চরণ ময়রা মাথায় নিয়ে পালক পাগড়ী, বললো বাবু আগুন আছে ধোঁয়া না নিলে আর চলছে না।
-আগুন দেব কি, এই দেখো মহাকুন্ড রয়েছে পাজরের পরতে পরতে,
রয়েছে বাক্য সাগরের সঞ্চিত ভূমিতে
কত আগুন লাগবে তোমার?
-না শুধু এক ঝলক দাও
-চোখপাতার বারুদ খসে দিলাম তাকে, ‘ধোঁয়া উঠুক’


চরণ ময়রা আমার সমস্ত ঘর ভরিয়ে দিলো আচ্ছন্ন মেঘে। দু-দন্ড রইলো তারপর আগুন নিয়ে হাটল উত্তরের পথে।


ছাইরঙা সন্ধ্যেয় নিমকাঞ্চনী হাতে প্রদীপ নিয়ে দাড়িয়ে,
-দুটো সল্তে হবে আলো জ্বালবো?
দুটো বলছো কি? বুকের ভেতর নিভে যাওয়া কত্তো সলতে পড়ে রয়েছে, রয়েছে কতো দুম‌ড়ানো-মুচড়ানো রঙ্গীন সুতোর সলতে
ক’খানা লাগবে নিতে পারো?
-‘না শুধু একখানা দাও প্রদীপ জ্বালবো’
কত দিনের পড়ে থাকা একটা রুপোর প্রদীপ ছিলো ঘরে, বাক্সভর্তি মিহি সুতোর
আছে তাতে; দিলাম তাকে-আলো জ্বলুক!


নিমকাঞ্চনী আধার নিয়ে বুকে আলো দিলো দূয়ারের আধার খোপে, ঘর যেন চুমকি হয়ে গেল। দু’দন্ড রইলো তারপর রুপোর নুপুর শব্দ কানে ঠেকিয়ে দূর্বা মাড়ালো।


কয়লা কালো রাত ছমছম হঠাৎ! রাতকুমারি চোখে নিয়ে ঘুম
-একটু নিরবতা দেবে ঘুমুবো
কতকাল চোখ বুঝিনি পিতকালো আধারের ভয়ে, নিরবতা আছে মাথার জমানো স্মৃতিতে। নিরব স্পন্দন সদা বাজে টিকটিক করে টিকটিকির মতো
‘কতখানি লাগবে নিতে পারো’?
‘না শুধু কিছুটা দাও’
যেটুকু নীরবতা জমিয়ে রেখেছিলাম ক্যালেন্ডারের গায়ে তা থেকে দিলেম কিছুটা তাকে; ‘তবুও ঘুম আসুক’
রাতকুমারি নিরবতা চোখের পালকে বুনে দিলো রাজ্যের ঘুম; নিদ্রা দেবীর ছলনায় কাত হলো পাড় মাতাল টাও। দু’দন্ড রইলো তারপর আচ্ছন্নতা দিয়ে মিলিয়ে গেল।


ফর্সা হয়ে আসছে ধোঁয়াটে আকাশ। রাত ততক্ষণে নাইতে গেছে ভোরের ধলাপাড়া গায়-যেখানে কূলবধুরা সব সকালে কাপর শুকায়। হঠাৎ দেখি তুমি ঠিক তার পাশে ছায়া হয়ে আছো শত বছরি বটান্তের শাখায়!


_________________________


উইলিকংসন রোড, সুসং নগর