অবশেষে তোমাকে দেখলাম গায়ে সাদা এপ্রেন, হাতে ডাক্তারি ব্যাগ পড়নে নীলডোরা শাড়ি। সেই ছোট্র বেলাটির মতোই আছো। ছিমছাম প্রসাধনী বিহিন একটা পুতুল যেন!
দূর থেকেই দেখলাম আমায় দেখে তোমার চোখ ঢেউ খেলে গেল যেন। কাছে গিয়ে দাড়াতেই তুমি বললে
আরে তুমি! হঠাৎ! এভাবে
আমি বললাম ‘তোমায় দেখতে এলেম’
দেখবার মতো তো কেউ নই আমি। তুমি বোধহয় পথ ভুল করে এসেছ?
অনেক টা সে-রকমই।
আমাদের কথা চলছিলো পরিচিত গানের মতো যেন গতকালও আমাদের কথা হয়েছে কিংবা আমরা খুব কাছাকাছি কথারতরী রোজ ভেরাই। অথচ কথা বলছি পঁচিশ বছর পর!
কিছুটা সময় পর তুমি কিছু দুর ঘুড়ে এসে সিড়িতে দাড়িয়ে বললে
আমার কথা মনে ছিলো তোমার?
থাকবেনা কেন? মনে করেই তো এলাম
কেউ হয়তো মনে করিয়ে দিয়েছে? আমি হকচকিয়ে গেলাম তারপর বললাম নাহ! এমনিতেও মনে ছিলো।
তুমি বললে মিথ্যা বলোনা পরে অস্বস্থি হবে?
আমি থেমে গেলাম। এটা তো বোঝানো সম্ভব না। আমি অনিলাকে মনে রেখেছি তবে সেটা অভিমানের জলে রোজ একবার করে ডুবিয়ে রেখে। মুখ ঘুড়িয়ে আমি বললাম আজকাল মিথ্যে বলতে গেলেও সাহস করতে হয় আমার সে সাহস নেই। একথা শুনে তুমি চুপ করে গেলে।
এমন সময় নাফিজা চা নিয়ে এলা। চা মুখে নিলাম কিন্তু মনে হলো সব কিছুুতেই তেতো মিশে যাচ্ছে; সব স্বাদ নষ্ট হয়ে আসছে। এবার সত্যিই মনে হলো আমার সাহস ফুরিয়ে গেছে তবুও বললাম
অনিলা কেমন আছো?
যেমন দেখছো।
বাহির থেকে ভেতর বোঝা যায়?
না দেখেই তো কতকিছু লিখে ফেল আমার বেলায় আটকে যাচ্ছ কেন?
তুমি যেন অনেকটা খাপছাড়া হয়ে আছো?
পঁচিশ বছর আগেও তাই ছিলাম?
মানুষ বদলায়।
তুমি চোখ থেকে চশমা নামিয়ে টেবিলে রাখলে তারপর বললে, আমি জানি তুমি ভালো আছো। জীবনে যা না পেয়েছো তা কাহিনী-সিনেমায় ফুটিয়ে তুলেছো। জীবনে আকাশ ছুতে পারনি কিন্তু সিনেমায় পেরেছ। দেখ কি ভাগ্য আমার এতদিন পেরুলো আমি কিছুই করতে পারিনি শুধু বেচে থাকার জন্য রোগীর পাশে দাড়াই সেবা করি। এই পর্যন্তই।
আমার বুক চিড়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস বয়ে গেল। আমি বললাম অনিলা তুমি ভালো নেই?
এবার তুমি মুখে আকঁলে অনমনস্কের ছায়া তারপর তাকালে একটিবার আমার দিকে পরক্ষনেই মাথা উচু করে বললে মানুষকে কতখানি জানতে পেরেছ তুমি?
আমি বললাম কিছুটা
এই শহরে কি কোন কাজে এসেছ?
না এমনিতেই
কদিন আছো?
এখন আর থাকতে ইচ্ছে করছেনা। কাল চলে যাব।
ঠিক আছে যাও।
আমি বুঝতে পারলাম তুমি আমার কথা এড়িয়ে গেলে
তোমার বিয়ের একটা কার্ড তুমি পাঠিয়েছিলে তাতে সবুজ কালিতে লিখেছিলে প্রতিমা দেখতে এসো বিসর্জনের আগে শেষ একবার হাসি মুখ দেখে যেও। তখন ভেবেছিলাম তুমি হয়তো রহস্য করে লিখেছ কিন্তু এখন দেখছি তা ভুল তুমি সত্যিই বিসর্জন হয়ে গেছ।
প্রসঙ্গ ইতিমধ্যে ব্যথা ছড়াতে শূরু করেছে তাই উঠে দাড়িয়ে আমি বললাম
তুমি কবে যে ডাক্তার হলে সেটা তো আমি জানি ই না !
তুমি কবে কবে কবি হয়ে গেলে সেটা কি আমি জানতে চেয়েছি?
ডাক্তার আর কবি কি এক হলো!
রোগের চিকিৎসা আর মনের চিকিৎসা দুটোই সারাতে উপাদান লাগে
মুখে সবসময় বিষন্ন রঙ মেখে আছো যে?
সুখের রঙ গুলো তোমাদের উঠোনে পড়ে আছে তো তাই
তুমি সেই আগের মতোই আছো চিঠিতে কত অভিমান ছিলো এখনও রয়ে গেছে। জীবনটা নতুন করে সাজাতে পারতে?
ঝরনা নদী হয়ে গেলে সাগরে চলে যায়। কিন্তু সে কি নদীতে ফিরে আসতে পারে?
নদী কিন্তু তার সমস্ত কিছু নিয়ে সাগরে ঝাপ দেয়
তাতে নদীর স্বপ্নরা আর নিজের জগতে থাকেনা, মিশে যায় সাগরে
তাই বলে নিজেকে তুমি এভাবে শাস্তি দিতে পার না
পারি! ‘কেননা সৃষ্টিতে বৃষ্টি পড়ে তার রুপ পাল্টে গেছে’